শিরোনাম

এবার প্রশ্নের মুখে পরামর্শক ব্যয়

এবার প্রশ্নের মুখে পরামর্শক ব্যয়

হামিদ-উজ-জামান :প্রশ্ন যেন পিছুই ছাড়ছে না বাংলাদেশ রেলওয়ের যোগাযোগ উন্নয়নে কারিগরি প্রকল্পের। প্রথম প্রকল্প প্রস্তাবেই একজন ক্লিনারের মাসিক বেতন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন কর্মচারীর অবাস্তব বেতন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ পর্যায় প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ফেরত নেয়ার পর পুনরায় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু এবার নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পরামর্শক ব্যয়। এক্ষেত্রে অত্যধিক ব্যয় প্রাক্কলন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় পরামর্শক প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। কোনো কোনো ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো এবং পরে মূল প্রকল্পে নেয়া হবে বলে কিছু পরামর্শক বাদ দেয়ার সুপারিশ দেয়া হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। গত ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ সুপারিশ দেয়া হয়েছে। ৫ নভেম্বর ওই পিইসি সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিনারসহ যেসব ক্ষেত্রে অবাস্তব বেতন-ভাতা ধরা হয়েছিল সেগুলো সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরামর্শকের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এগুলো প্রতিপালন করা হলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, নতুন করে আর পিইসি সভার প্রয়োজন হবে না।

সূত্র জানায়, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন করে ১১টি উপপ্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এসব প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, নকশা প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর রেলওয়ে কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি’ নামের প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৭০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

পিইসি সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক ৩২ জন এবং দেশীয় ৬৮ জন পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। সভায় পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, পরামর্শকের ধরন ও সংখ্যা পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, প্রকল্পে পরামর্শকের আধিক্য রয়েছে। আবার একই বিষয়ে দুই বা অধিক পরামর্শকের (বিভিন্ন পর্যায়) সংস্থান রাখা হয়েছে। যা হ্রাস করা যেতে পারে। এছাড়া প্রজেক্ট রিভিউয়ার পরামর্শক, সোশ্যাল সেভগার্ড স্পেশালিস্ট, ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন স্পেশালিস্ট, এইচআইভি/এআইডস স্পেশালিস্ট বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে এগুলো মূল বিনিয়োগ প্রকল্পে ধরা হবে তাই কারিগরি প্রকল্প থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য পরামর্শকের ধরন, সংখ্যা ও জনমাস যৌক্তিকভাবে কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এছাড়া পরামর্শক ব্যয়ের সঙ্গে গাড়ি ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় পিইসি সভায়। এর জবাবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের ১০টি কম্পোনেন্টের বিশদ নকশাসহ ১১টি কম্পোনেন্টের সমীক্ষা করা হবে। প্রকল্প এলাকা দেশব্যাপী বিস্তৃত হওয়ায় পরামর্শকদের মাঠ পর্যায়ে প্রচুর যাতায়াত করতে হবে। তাই চলমান অন্য একটি প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গাড়ি ভাড়া প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে সভায় এ ব্যয় অত্যধিক বলে মত ব্যক্ত করে ২ কোটি টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রস্তাবিত দুটি জিপ গাড়ি ক্রয়ের বিষয়টিও বাদ দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পে আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের মাসিক বেতন ২৫ লাখ থেকে গড়ে ১৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এটি অত্যধিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। এর পক্ষে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরার যুক্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত যৌক্তিকভাবে ব্যয় হ্রাসের বিষয়ে সভায় ঐকমত্য হয়।

পরামর্শকের বাইরে সভায় বিবিধ ব্যয় বাবদ ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ইন্টারেস্ট ডিউরিং ইমপ্লিমেন্টেশন বাবদ প্রস্তাবিত ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অপ্রত্যাশিত ব্যয় নির্বাহের জন্য বিবিধ বাবদ ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে ইন্টারেস্ট ডিউরিং ইমপ্লিমেন্টেশন বাবদ প্রস্তাবিত অর্থ মূলত ঋণ পরিশোধের কিস্তির জন্য ধরা হয়েছে। সভায় মতপ্রকাশ করা হয় যে, ঋণের কিস্তি পরিশোধ ইআরডির এখতিয়ার। প্রকল্প থেকে এ অর্থ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই বিবিধ খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি ইআরডির সঙ্গে আলোচনা করে সুস্পষ্ট ও সঠিক তথ্য টিএপিপিতে বলা হয়েছে।

সুত্র:যুগান্তর, ০৮ নভেম্বর ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.