শিরোনাম

ধাপে ধাপে খুলবে মেট্রো রেলের বাকি স্টেশনগুলো


।। নিউজ ডেস্ক ।।
যাত্রী নিয়ে মেট্রো রেল চলাচলের ১০ দিন পার হয়েছে। এর মধ্যে এক দিন সাপ্তাহিক ছুটিও ছিল। প্রথম দিন থেকেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের ভাবনায় ছিল দেশের প্রথম আধুনিক এই গণপরিবহনের সঙ্গে নিজেদের ও যাত্রীর অভ্যস্ততা তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে এখনো পুরোপুরি সফল হতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এই সময়ে মেট্রো চলাচলে সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হয়েছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকিট কেনার মেশিন নিয়ে। পুরো সময় সব ভেন্ডর মেশিন একসঙ্গে কাজ করেনি। ভেন্ডর মেশিনের সমস্যার সমাধান সহজে হচ্ছে না—এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে বাকি স্টেশনের মধ্যে পল্লবী আগে খুলে দেওয়া হচ্ছে। বাকি স্টেশনগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত আসল যাত্রীর দেখা পাচ্ছে না মেট্রো রেল। উত্তরা-আগারগাঁও পথে যাতায়াত করা যাত্রীদের বেশির ভাগই উৎসুক মানুষ। তাই ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস বিক্রি হচ্ছে কম। অতিরিক্ত চাপ পড়েছে সিঙ্গেল জার্নি টিকিটে। মেট্রোর জনবল এখনো পুরো নিয়োগ হয়নি। তাই অন্য স্টেশনগুলো খোলার আগে জনবলের বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে। মেট্রোর সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) শাটল বাসের সেবাও চলে যাচ্ছে পরিকল্পনার বাইরে।

১০ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের পরবর্তী কাজের ছক তৈরি করতে চায় মেট্রো রেল পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ জন্য আজ রবিবার ডিএমটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হবে। সেখানেই পরের করণীয় ঠিক করা হবে। এখন থেকে প্রতি ১০ দিন পর পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

১৫ জানুয়ারি খুলতে পারে পল্লবী স্টেশন
মেট্রো রেলের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২৬ মার্চ উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনেই ট্রেন থামার কথা। তবে বাকি স্টেশনগুলো একসঙ্গে খোলা হবে না। ধাপে ধাপে স্টেশনগুলো চালু করা হবে। মাঝের স্টেশনগুলোর সবার আগে খুলবে পল্লবী। আগামী ১৫ জানুয়ারি মেট্রোর পল্লবী স্টেশন চালু হতে পারে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামীকালের (আজ) বৈঠক থেকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হলে এক সপ্তাহের মধ্যে স্টেশন চালু করা সম্ভব। বাকি স্টেশনগুলো ধারাবাহিকভাবে চালু করা হবে। যেহেতু পল্লবীতে চাপ বেশি, তাই এটা আগে চালু হচ্ছে।’

ভেন্ডর মেশিনে সমস্যা
মেট্রো রেলে যাত্রী পরিবহনের প্রথম দিন থেকে ভেন্ডর মেশিনের সমস্যা বেশি ভোগাচ্ছে যাত্রীদের। শুরু থেকেই সব ভেন্ডর মেশিন সমানতালে সচল ছিল না। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে টিকিটের জন্য টাকা দিলে সেই টাকা মেশিনে আটকে যাচ্ছে। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এখানে পুরনো ময়লা কাগজ দিলে আটকে যাবে। এটা ফটোকপি মেশিনের মতো। পরে আবার সেই কাগজ বের করতে হয়।’

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, মেশিনের কোনো দোষ নেই। সারা পৃথিবীতে বাজে নোট মেশিন নেয় না। মানুষকেই সচেতন হতে হবে। এখনো মেট্রোতে প্রকৃত চাপ তৈরি হয়নি। তাই অভ্যস্ত হওয়ার এটা উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে টিকিট আউট সোর্সিংয়ে বাইরে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

শাটল বাসে নেই, মেট্রোর যাত্রী
মেট্রোর যাত্রীদের পরিবহন করতে বিআরটিসি শাটল বাস সেবা চালু করেছে। এতে বিআরটিসির ৫০টি দ্বিতল বাস রয়েছে। মেট্রো রেলের উত্তরা ও আগারগাঁও এলাকায় স্টেশনের পাশেই শাটল বাস সার্ভিস দিতে বাস রাখার জায়গা করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী শাটল বাস চলাচল করছে না। মেট্রোর যাত্রী না থাকায় যেকোনো জায়গা থেকে যাত্রী তুলছে এসব বাস।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, শাটল বাসের জন্য মেট্রোর পথ ধরে আলাদা বাসের রুট করার দরকার ছিল। কিন্তু এখানে তা হয়নি। বর্তমান পথেই শাটল বাস চলছে। এই বাসে মেট্রো বিষয়ে তথ্য নেই। শাটল বাসে পরের ট্রেন কখন ছাড়বে সেটাও জানার উপায় থাকা প্রয়োজন। ফলে এই শাটল বাস প্রকৃত ‘শাটল’ হয়ে উঠতে পারবে না।

মেট্রোতে এখনো প্রকৃত যাত্রী কম
মেট্রো রেলের সমীক্ষা অনুযায়ী, একটি ট্রেনে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। পুরো পথে দিনে যাতায়াত করবে পাঁচ লাখ মানুষ। কিন্তু ১০ দিনে একটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ২০০ যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। এখনো যারা মেট্রোতে চড়ছে, তাদের বেশির ভাগই উত্সুক মানুষ, তারা প্রকৃত যাত্রী নয়। ফলে এমআরটি পাস বিক্রি কম হচ্ছে। চাপ বেড়েছে সিঙ্গেল জার্নি টিকিটে। উত্সুক মানুষের চাপ কমলে প্রকৃত যাত্রী দেখা যাবে।

জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, যারা প্রথম দিকে মেট্রোতে ওঠে, তারা অনেকেই অভ্যস্ত হয়েছে গেছে। কিভাবে, কখন কী করতে হবে, সেটা তারা জানে। কিন্তু এখনো অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে আসছে ট্রেনে উঠতে, তারা অভ্যস্ত হতে পারছে না।

জনবলের অভাব
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, এখনো পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সব স্টেশন খোলার আগে অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। আবার ভেন্ডর মেশিনসহ স্টেশনে অনেক জায়গায় অফিস কর্মকর্তাদের এনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেটা পরিকল্পনায় ছিল না। ফলে জনবল সংকট হচ্ছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, একসঙ্গে অনেক লোক নেওয়া ঠিক হবে না। পরিস্থিতি বুঝে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রয়োজনীয় জায়গায় আগেই লোক নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অন্য জায়গাগুলোতেও জনবল নিয়োগ হচ্ছে।

সূত্রঃ কালের কন্ঠ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.