শিরোনাম

২০ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনে চলছে ট্রেন

২০ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনে চলছে ট্রেন

রাজু আহমেদ :

প্রায় ২০ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে চলছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন সার্ভিস, যা এখন ভোগান্তির আরেক নাম। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, সিডিউল বিপর্যয়, ট্রেনের বগিতে নষ্ট ফ্যান আর প্রায়ই ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া এই ট্রেন সার্ভিসের নাম দিয়েছেন যাত্রীরা ‘জমিদার এক্সপ্রেস’। দিন দিন ভোগান্তিতে এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এ পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী প্রায় অর্ধলক্ষ যাত্রী। তবে এই বিপুল সংখ্যক যাত্রী থাকলেও যাত্রীসেবার বালাই নেই এ ট্রেন সার্ভিসে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যবসায়িক অঞ্চল হওয়ায় দেশের স্বল্প দূরত্বের রেলপথগুলোর মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ। এ রুটে বর্তমানে ১৫ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চলাচল করে ৬ জাড়া ট্রেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বাস ভাড়া যেখানে ৩৬ টাকা, সেখানে ট্রেনের টিকিট ১৫ টাকা হওয়ায় অধিকাংশ চাকরিজীবী মানুষের প্রথম পছন্দ এই ট্রেন। নারায়গঞ্জ শহরের প্রধান তিনটি কলেজ চাষাঢ়ার আশপাশে অবস্থিত হওয়ায় ফতুল্লা, পাগলা এলাকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন। যে কারণে সকালে অফিসের সময় ও দুপুরে কলেজ ছুটির পর এই ট্রেনে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। এ রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কপালেও জুটছে ভয়াবহ ভোগান্তি। সর্বশেষ গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী ট্রেনটি ২নং রেলগেটের ক্রসিংয়ে বিকল হয়ে পড়ে। এতে চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জগামী ও নিতাইগঞ্জ থেকে চাষাঢ়াগামী রাস্তার উভয় লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর ট্রেনের ইঞ্জিন মেরামত করার পর আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২৭ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টায় পুনরায় এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১২ অক্টোবর শহরের ১নং রেলগেট এলাকায় বোস কেবিনের সামনে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আটকা পড়ে। এতে দুই ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকে ১নং রেলগেট এলাকায় যান চলাচল। ফলে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীদের পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের। ১৫ অক্টোবর ১২টা ২০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন দুপুর ১টা ৭ মিনিটে চাষাঢ়া স্টেশন ছেড়ে কেন্দ্রীয় স্টেশনে যাওয়ার পথে ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের লেভেল ক্রসিংয়ে বিকল হয়ে পড়ে। ট্রেন বিকল হওয়ায় ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প ইঞ্জিন এনে ট্রেন সরিয়ে নেয়ার পর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে যান চলাচল শুরু হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, যাতায়াতের প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি করে আসছে। দুপুরে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা যে ট্রেন চাষাঢ়ায় পৌঁছানোর কথা ১টা ২৫ মিনিটে, সেখানে চাষাঢ়া এসে পৌঁছায় ২টা ২০ মিনিটে। নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানান, রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ত্রুটি আছে। প্রতিদিন যাত্রীবোঝাই করে যাতায়াত করে। এরপরও নাকি লাভ হয় না। মাঝখানে একবার টিকিটে সিটের ব্যবস্থা করল। টিকিট কিনলে সিট পাবে। এখন আবার তা বন্ধ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ স্টেশন ভাঙা, চাষাঢ়াও একই অবস্থা, চালে টিন নেই। যাত্রীরা বলেন, এর থেকেও ভয়ংকর হচ্ছে যাত্রীদের টিকিট চেক করার জন্য টিটি নেই। নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম মোস্তফা বলেন, যে ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে, এগুলোর ২০ বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে ঘন ঘন ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডাবল রেললাইন প্রকল্পের কাজের জন্য এখন ট্রেন চলাচলে একটু সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে ১০-১৫ মিনিট দেরি করে ট্রেন আসছে। ডাবল রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তখন ২০ মিনিটে যাতায়াত করা যাবে। বিভাগীয় মেকানিক্যাল প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, চলতি বছরের জুনে কিছু নতুন ইঞ্জিন আসার কথা রয়েছে। সেগুলো এলে হয়তো এই দুর্ভোগ থাকবে না।

সুত্র:যুগান্তর, ১৩ জানুয়ারি ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.