শিরোনাম

বিএসএফের বাধায় দেড় বছর ঝুলে আছে নির্মাণকাজ!

বিএসএফের বাধায় দেড় বছর ঝুলে আছে নির্মাণকাজ!

ইসমাইল আলী: ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করা হচ্ছে আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। তবে মূল নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। গত বছর সেপ্টেম্বরে এর একটি অংশ চালু করা হয়েছে। তবে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) বাধায় প্রকল্পটির দুটি স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় বছর ধরে। এতে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, গত বছর বিএসএফ প্রকল্পটির সালদানদী ও কসবা স্টেশন এলাকায় কাজ বন্ধ করে দেয়। তবে নানা উদ্যোগ নিলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। পরে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এর পরও কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এতে ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পটির সালদানদী স্টেশনের নিকটবর্তী নির্মাণাধীন ডাউন ২৬১নং সেতুর কাজ বিএসএফ প্রথমবার বন্ধ করে দেয় গত বছর ২৫ মার্চ। ৩১ মার্চ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে সুরাহা করতে বলা হয়। সে সময় ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর ওই সেতুর কাজ শুরু হলে ১০ জুন আবার তা বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। এরপর প্রায় সাত মাস কাজ বন্ধ থাকে।

ভারতীয় হাইকমিশনারকে গত বছর ২৪ জুন বিষয়টি অবহিত করা হয়। এছাড়া ২ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি সুরাহা করতে আবারও চিঠি দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১১ অক্টোবর প্রকল্পে ঋণদানকারী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) বিষয়টি জানানো হয়। সেবার ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

গত ১ জানুয়ারি বিজিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. কর্নেল মেহেদির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনাক্রমে সালদানদী স্টেশনের নিকটবর্তী ২৬১নং ডাউন সেতুর কাজ শুরু করা হয়। তবে ১৩ জানুয়ারি আবারও এ কাজ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। পরে ২৬ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে কাজ আর শুরু করা যায়নি। আর বিএসএফের বাধায় কসবা স্টেশনের কাজ গত বছর মার্চ থেকেই বন্ধ। সেটা আর শুরুই করা যায়নি। ফলে সার্বিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় এ কাজে বাধা দিয়েছে বিএসএফ। তারা জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। এর আগে ভারতও সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে বাধা দিয়েছিল বিজিবি। এখন তারা বাধা দিচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানালেও কাজ হচ্ছে না।

বৈঠকে প্রকল্পটির ভেরিয়েশন প্রস্তাবের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ সময় জানানো হয়, রেলপথ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিডিক চুক্তির ভিত্তিতে সময়মতো জমি বুঝিয়ে না দেয়ার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ দাবি করেছে। তাদের দাবির বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, গত বছর আগস্টে প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তা বিশ্লেষণে দেখা যায়, নকশায় ত্রুটি সংশোধনের কারণে প্রকল্পটির কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি নতুন কিছু অঙ্গ যুক্ত হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এতে পরামর্শক খাতের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাবে।

আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির আরডিপিপি জমা দিয়েছে। তবে এ ব্যয়ের হিসাব এখনই চূড়ান্ত বলা যাচ্ছে না। কারণ আরডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। আরডিপিপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করলে তা চূড়ান্ত হবে।

তথ্যমতে, প্রকল্পটির আওতায় ১৪৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন ও ৪০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং ১৩টি মেজর ও ৪৬টি মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ১১টি স্টেশনের ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। এছাড়া ৬৮ হাজার ১৯০ বর্গমিটারের ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস নির্মাণ করা হচ্ছে।

চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার) যৌথভাবে এ প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। আর পরামর্শক হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার দোহা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও কোরিয়া রেল নেটওয়ার্ক অথরিটি, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড, ভারতের বালাজি রেলরোড সিস্টেমস লিমিটেড এবং বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড।

উল্লেখ্য, আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ৫০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ দিচ্ছে চার হাজার ১১৮ কোটি ১৪ লাখ এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দিচ্ছে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে এ ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র: শেয়ার বিজ , ৪ অক্টোবর ২০২২


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.