শিরোনাম

ট্রেনে ৪০ কিলোমিটার লাইনে ৪৭টি অরক্ষিত ক্রসিং


।। নিউজ ডেস্ক ।।
দেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেললাইন কেটে ফেলা, নাটবোল্ট ও ফিশপ্লেট খুলে ফেলা, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল নিক্ষেপ, রেলপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগিতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে চারজন মারা যান। এ অবস্থায় যাত্রীদের সুরক্ষায় ও রেলপথ নিরাপদ করতে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে রেলওয়ে। চট্টগ্রামে হামলা কিংবা নাশকতার ঝুঁকিতে থাকা রেল পয়েন্টগুলোও চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে। কর্মকর্তারা বলছেন, গেটম্যানবিহীন লেভেল ক্রসিং এবং রেললাইনের নিরিবিলি স্থানগুলোই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে রেলপথের ১৬৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব পয়েন্টের নিরাপত্তায় জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার ১৫৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য চেয়ে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগ চিঠি দিয়েছে রেলের মহাপরিচালকের কাছে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আনসার সদস্য মোতায়েন শুরু হয়েছে।

রেলওয়ের তথ্য বলছে, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলে সারাদেশে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই বা অবৈধ। আবার বৈধ ১ হাজার ৪৯৫টির মধ্যে ৬৩২টিতে গেটম্যান নেই। গেটম্যান ছাড়া চলছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৭৭১টি রেলক্রসিং। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগের চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৪৭টিতেই গেটম্যান নেই। এ থেকেই বোঝা যায়, রেললাইনগুলো কতটা অরক্ষিত এবং অনিরাপদ। গেটম্যান নেই এমন লেভেল ক্রসিংগুলোকে নাশকতার ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে এখন চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে।

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত রেললাইন এলাকা নিয়ে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগ। এখন এর সঙ্গে কক্সবাজার রেললাইন যুক্ত হওয়ায় এই বিভাগের পরিধি আরও অন্তত ১০০ কিলোমিটার বেড়েছে। দিন দিন এই রেলপথে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই ট্রেন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসছে জোরেশোরে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, রেললাইন ও ট্রেনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার রেললাইনে চলাচলরত ট্রেনের সামনে টহল ইঞ্জিন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনও ছেড়ে যাওয়ার আধঘণ্টা আগে টহল ইঞ্জিন চলাচল করছে। রাতে চলাচলকারী ট্রেনের আগে টহল ইঞ্জিন চলাচল করে। আর ছোট ছোট গন্তব্যের রেলপথে ট্রেনের ট্রলিও চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছুটা কমিয়ে আনা হচ্ছে ট্রেনের গতি। নিরাপত্তা

জোরদারে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য ১ হাজার ১৫৭ জন আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের মোতায়েন শুরুও হয়েছে।

জানা গেছে, রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের পক্ষ থেকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রেলওয়ে ট্র্যাকগুলো ওয়েম্যান, আরএনবি ও আনসার সদস্যদের মাধ্যমে দিন এবং রাতে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। এ ছাড়া প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার করে প্যাট্রলিংয়েরও সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য প্রতিটি কন্ট্রোল অফিসে কর্তব্যরত ওয়েম্যান, আরএনবি ও আনসার সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করার কথাও উল্লেখ করা হয়। ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।

চিঠিতে বলা হয়, রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সময়কে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরে নিয়ে রেললাইন নিবিড়ভাবে পাহারার ব্যবস্থা ও তা নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ব্যবস্থা করতে হবে অ্যাডভান্স পাইলটিংয়ের। এ ক্ষেত্রে মোটর ট্রলি ও লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্টেশন মাস্টার, পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি করে নিয়মিত কন্ট্রোল অফিসকে অবহিত করবেন।

তবে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্তীর্ণ রেললাইন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে নাশকতা চালানো হচ্ছে। এটা বন্ধ করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে যাত্রীদের স্টেশনে কিংবা ট্রেনে প্রবেশের আগে তল্লাশির বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। চালানো হচ্ছে সচেতনতামলূক নানা প্রচার।

সূত্রঃ সমকাল


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।