শিরোনাম

রেলপথে পণ্য পরিবহন ক্রমেই বাড়ছে

রেলপথে পণ্য পরিবহন ক্রমেই বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক: নভেল করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রেলপথে বাড়ছে পণ্য পরিবহন। এর মধ্যে গত জুনে প্রথমবারের মতো দেশ দুটির মধ্যে এক মাসে চলাচল করা পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। আর গত অক্টোবরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল করেছে ১৪৫টি পণ্যবাহী ট্রেন। পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টা, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালসহ নানা ধরনের পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে এসব ট্রেনে। তবে রেলপথের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাটি এখনো একপক্ষীয়।

চলতি বছরের অক্টোবরে রেলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৫৭ টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। পরিবহন হওয়া এসব পণ্যের সবটাই আমদানি করেছে বাংলাদেশ। গত মাসে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এসব পণ্য পরিবহন করে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১৪৫টি পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে শুধু পাথর পরিবহন করা হয়েছে ৫৫টি ট্রেনে। এর বাইরে ৪৯টি ট্রেনে ভুট্টা ও গম, সাতটি ট্রেনে ভোজ্যতেল, ১৪টি ট্রেনে ফ্লাই অ্যাশ, তিনটি ট্রেনে জ্বালানি তেল, একটি কনটেইনার ট্রেন, ১৫টি পার্সেল ট্রেন ও একটি ট্রেনে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য পরিবহন করা হয়।

অক্টোবরে ভারত থেকে রেলপথে সবচেয়ে বেশি পরিবহন করা হয়েছে পাথর। এ মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৯৮ টন পাথর পরিবহন করা হয়। গম পরিবহন করা হয় ৫৪ হাজার ৫৫৫ টন। একইভাবে ৭১ হাজার টন ভুট্টা, ১৭ হাজার ৩৬৮ টন ভোজ্যতেল, ৩৪ হাজার ৮১৬ টন ফ্লাই অ্যাশ, ১ হাজার ৫১৮ টন পার্সেল, ৮৮০ টন কনটেইনার, ২০ হাজার ৫০২ টন মোটরযান ও ৬ হাজার ৮৫০ টন ডিজেল পরিবহন করা হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত ২২ মার্চ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দুই দেশের মধ্যে রেলপথে যাত্রী পরিবহন এখনো বন্ধ। তবে রেলে পণ্য পরিবহন কার্যক্রমও ওই সময় বন্ধ হলেও গত ৯ মে থেকে তা পুনরায় চালু হয়েছে। প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর ৯ মে ভারত থেকে পেঁয়াজবাহী একটি ট্রেন গেদে-দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর গত ২৬ জুলাই প্রথমবারের মতো রেলপথে ভারত থেকে ৫০টি কনটেইনারে সাবান, শ্যাম্পু, টেক্সটাইল ফ্যাব্রিকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা হয়। কনটেইনার ট্রেনটি ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল প্রতি মাসে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য বলছে, গত জুন মাসে ১০৩টি পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। এসব ট্রেনে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ভুট্টা, হলুদ, ধানের বীজ, চিনি, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহনের তথ্য দিয়েছিল ভারতীয় হাইকমিশন। গত জুনে প্রথমবারের মতো ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল করা ট্রেনের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলপথে পণ্য পরিবহন বেড়েছে। তবে পরিবহন হওয়া পণ্যের পুরোটাই ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কোনো পণবাহী ট্রেন ভারতে যাচ্ছে না।

মূলত যাত্রী পরিবহনের পরই বাংলাদেশ রেলওয়ের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস পণ্য পরিবহন। ১৯৮৭ সাল থেকে কনটেইনার পরিবহন শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডির (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) মধ্যে কনটেইনার পরিবহন করে আসছে সংস্থাটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৭ লাখ ৪২ হাজার টন কনটেইনার পরিবহন করেছিল রেলওয়ে। পরের অর্থবছর (২০১৭-১৮) কনটেইনার পরিবহন কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮১ হাজার টনে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলে ৭ লাখ ৬ হাজার টন কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে যত কনটেইনার পরিবহন হয়, তার মাত্র ৪-৫ শতাংশ রেলপথে পরিবহন হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

সূত্র:বণিক বার্তা, নভেম্বর ০৯, ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।