শিরোনাম

রংপুর বিভাগে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ৪২টি ট্রেন

রংপুর বিভাগে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ৪২টি ট্রেন

নিউজ ডেস্ক:   রংপুর বিভাগের জনসাধারণের সহজ বহনের জন্য লালমনিরহাট রেল ডিভিশন থেকে ১২টি রেল রুটে নিয়মিত ৬২টি ট্রেন চলাচল করার কথা সেখানে এখন চলছে মাত্র ৪২টি ট্রেন। রেল ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) ও চালক সংকটের কারণে লালমনিরহাট রেল বিভাগের ছয়টি সেকশনে চলাচলকারী ২০টি ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪২টি ট্রেন চলছে জোড়াতালি ইঞ্জিন দিয়ে।

জানা যায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে ইঞ্জিন যাত্রীবাহী কোচ ড্রাইভার স্টেশন মাস্টার সংকটের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে রেল ইঞ্জিন, যাত্রীবাহী কোচ, ড্রাইভার ও স্টেশন মাস্টারের সংকটের দরুন জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হতে পারে। বর্তমানে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে ছয়টি সেকশনে ট্রেন চলাচল করে। সেকশনগুলো হচ্ছে লালমনিরহাট, বুড়িমারী, লালমনিরহাট তিস্তার মনাবাজার, লালমনিরহাট পার্বতীপুর, লালমনিরহাট-শান্তাহার, পার্বতীপুর-বিরল বর্ডার ও কাঞ্চন-পঞ্চগড়। ট্রেন সময়সূচি অনুযায়ী এসব ‘সেকশনে মেইল এক্সপ্রেস’ ২৪টি, ‘লোকাল মিক্সড’ ২৬টি, আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ১২টি, ট্রেন চলাচলের সিডল রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় ইঞ্জিন, ড্রাইভার, যাত্রীবাহী কোচ ও স্টেশন মাস্টার না থাকায় চারটি মেইল এক্সপ্রেস ও ১৬টি লোকাল মিক্সড ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিভাগে বর্তমানে ২০টি মেইল এক্সপ্রেস, ১০টি লোকাল মিক্সড ও ১২টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন কখনো নিয়মিত কখনোবা অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে ট্রেন চলাচলও স্যাটিং করার জন্য ৫৬টি রেল ইঞ্জিনের প্রয়োজন। বর্তমানে এই ডিভিশনে ২৮টি ইঞ্জিন রয়েছে। তন্মধ্যে ২১টি কার্যকর। বাকি সাতটি কারখানায় মেরামত কিংবা আন্ডার রিপিয়ারিং-এ রয়েছে।

রেল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একটি ইঞ্জিনের ইকনোমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর। সে ক্ষেত্রে এই বিভাগে ২৮টি ইঞ্জিনের মধ্যে আটটি ইঞ্জিন ৫৭ বছরের, ১০টি ইঞ্জিন ৪৯ বছরের, সাতটি ইঞ্জিন ৪০ বছরের, একটি ইঞ্জিন ৩৬ বছরের ও একটি ইঞ্জিন ১৩ বছরের। এ সত্ত্বেও জোড়াতালি দিয়ে চলছে লালমনিরহাট রেল ডিভিশনে ট্রেন চলাচল।

এ ডিভিশনের রেলওয়ে ড্রাইভারের মঞ্জুরিকৃত পদ ২৫৪টি। বর্তমানে কর্মরত ১৩৫ জন। ১১৯টি ড্রাইভারের পদ শূন্য। এই স্বল্পসংখ্যক ড্রাইভার দিয়ে ট্রেন চলাচল করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনে স্টেশন মাস্টারের মঞ্জুরিকৃত পদ ১৭৫টি। বর্তমানে কর্মরত ৯৫ জন। শূন্য পদ ৮০টি। ২০১৯ সালে ১৩ জন স্টেশন মাস্টার এলপিআর এ যাবে। প্রয়োজনীয় স্টেশন মাস্টার না থাকায় ইতোমধ্যে ২৪টি স্টেশনের অপারেটিভ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এই ডিভিশনের যাত্রীবাহী কোচগুলো অতি পুরাতন। দরজা, জানালা ও বেঞ্চ ভাঙা। ল্যাট্রিনে পানি থাকে না। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। অপরিষ্কারের কারণে রয়েছে ছারপোকার অত্যাচার। মাঝে মাঝে যাত্রীবাহী কোচগুলো চলতে চলতে অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে যাত্রীদের বিড়ম্বনার সীমা থাকে না।

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের চলাচলের পর প্রায় পরিত্যক্ত ও আংশিক অচল কোচগুলো লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের নিকট অর্পণ করা হয়েছে। নতুনভাবে আমদানিকৃত যাত্রীবাহী কোচগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন ট্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। লালমনিরহাট বিভাগে নতুন কোচ দেওয়া হয় না। সম্প্রতি আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটির কোচ অকেজো হওয়ায় ট্রেন চলাচলে মারাত্মক বিলম্ব ঘটছিল। এ সমস্যাগুলোর কারণে ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এরপরেও জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন চলছে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে রেল ইঞ্জিন, যাত্রীবাহী কোচ, ড্রাইভার ও স্টেশন মাস্টার সংকট বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট মো. শওকত জামিল মোহসী ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম জানান, এই সমস্যাগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

সুত্র:ইত্তেফাক, ১৯ মার্চ, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.