শিরোনাম

বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়ছে রেলের বিভিন্ন সেবা

বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়ছে রেলের বিভিন্ন সেবা

ইসমাইল আলী: জনবল সংকটে ধুঁকছে রেলের বিভিন্ন সেবা। বর্তমানে সংস্থাটির সাড়ে ১৫ হাজার শূন্যপদ রয়েছে, যার বড় অংশই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। এজন্য বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রীর টিকিট চেকিংসহ অন্যান্য বিষয় দেখভাল করতে অনবোর্ড সেবা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেশন পরিচ্ছতার দায়িত্বও বেসরকারি খাতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে রেলওয়ে।
এর বাইরে বেশকিছু ট্রেনও বেসরকারি খাতে ইজারায় পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া বহু বছর ধরে রেলের টিকেটিং ও ক্যাটারিং সেবাও চলছে বেসরকারি খাতে।
সম্প্রতি রাজধানীর রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে পূর্বাঞ্চল রেলে ২৪টি ট্রেনে অনবোর্ড সার্ভিস দিচ্ছে ১১ প্রতিষ্ঠান। এজন্য বছরে পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। আর ৪৮টি ট্রেনে ক্যাটারিং সেবা দিচ্ছে ১৭ প্রতিষ্ঠান। এছাড়া পূর্বাঞ্চলের ৪২টি ট্রেন বেসরকারি খাতে ইজারায় পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি পূর্বাঞ্চলের ১৫৩টি স্টেশন পরিচ্ছতায় ১৬ প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। এতে বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

তথ্যমতে, যাত্রীসেবার উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের আগে থেকে রেলওয়েতে বিভিন্ন ট্রেনে বুফেকার/রেস্টুরেন্টকার ও উচ্চশ্রেণির ভোজনালয় পরিচালনার জন্য ক্যাটারার নিয়োগ করা হতো। আন্তঃনগর ট্রেন প্রবর্তনের আগে ৯ জোড়া ট্রেনে এ সেবা দেওয়া হতো। আর ১৯৮৫ সালে আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালুর পর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে গ্রুপভিত্তিক ক্যাটারার্স নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে ৪৮টি ট্রেনে ১৭ প্রতিষ্ঠান ক্যাটারিং সেবা দিচ্ছে। এতে বার্ষিক প্রদেয় লাইসেন্স ফি প্রায় ৬৪ লাখ টাকা।

এদিকে ট্রেনে বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে টিকিট চেকিংসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার দায়িত্ব রেলওয়ে অ্যাটেনডেন্টদের। যদিও পূর্বাঞ্চলের ২২টি আন্তঃনগর ট্রেনে রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাটেনডেন্টরা এ সেবা দিচ্ছেন। আর লোকবল ঘাটতি থাকায় পূর্বাঞ্চলের ২৪ ট্রেনে এ সেবা (অনবোর্ড) বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১১টি প্রতিষ্ঠান। এতে রেলের প্রতি মাসে ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।
এর বাইরে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন ঢাকা বিভাগের ৮২টি স্টেশন পরিচ্ছতার জন্য আটটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। এতে বছরে গুনতে হচ্ছে প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর চট্টগ্রাম বিভাগের ৭১টি স্টেশন পরিচ্ছতায় আট প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। এতে বছরে গুনতে হচ্ছে প্রায় এক কোটি তিন লাখ টাকা।

এসব সেবা ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের ৪২টি মেইল ও লোকাল ট্রেন বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়া হয়েছে। চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব ট্রেন পরিচালনা করছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করলেও রেলের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ট্রেন চলছে লোকসানে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়েকে কম্পিউটারাইজড টিকেটিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে সিএনএস লিমিটেড। এজন্য টিকিটপ্রতি দুই টাকার বেশি চার্জ গুনতে হচ্ছে রেলওয়েকে।

জানতে চাইলে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, জনবল সংকটে ট্রেনের বিভিন্ন সেবা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি রেলপথমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, বেসরকারি খাতে আর কোনো ট্রেন ইজারা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বিদ্যমান চুক্তি শেষে ট্রেনগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া ট্রেনের টিকেটিং সেবাও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য চেষ্টা চলছে। এজন্য রেলওয়ের নিজস্ব আইটি বিভাগ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল রয়েছে ৪০ হাজার ২৭৫টি। তবে কর্মরত মাত্র ২৪ হাজার ৬২২ জন। অর্থাৎ, ১৫ হাজার ৬৫৩টি পদ শূন্য। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৮০০ শূন্যপদই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। আর এসব পদ সরাসরি বিভিন্ন সেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
বর্তমানে রেলে সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ রয়েছে তৃতীয় শ্রেণির। এ শ্রেণির অনুমোদিত পদ রয়েছে ২১ হাজার ৬৪৪টি। এর মধ্যে কর্মরত ১২ হাজার ৬০৩ জন। শূন্য রয়েছে ৪২ শতাংশ বা ৯ হাজার ৪১ পদ। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৯টি বা ৩৫ শতাংশ। রেলের এই শ্রেণির পদ রয়েছে ১৬ হাজার ৪৮১টি। তবে কর্মরত ১০ হাজার ৭২২ জন।

এদিকে জনবল সংকটের কারণে সারা দেশে রেলের ৪৩৭ স্টেশনের মধ্যে ১৩৯টি রয়েছে বন্ধ। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ৫৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৮৩টি। এছাড়া সারা দেশে রেলের এক হাজার ৪০২টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৯৪৬টিতে কোনো গেটকিপার নেই। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে গেটকিপারবিহীন অরক্ষিত ক্রসিং রয়েছে ৪৩৪টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৯৬৮টি।

সুত্র:শেয়ার বিজ, অগাস্ট ২৭, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.