শিরোনাম

বাংলাদেশ রেলওয়ে : একই ট্রেন দিয়ে অতিরিক্ত ট্রিপের প্রস্তাবে অনীহা!

বাংলাদেশ রেলওয়ে : একই ট্রেন দিয়ে অতিরিক্ত ট্রিপের প্রস্তাবে অনীহা!

সুজিত সাহা:
এক দশক ধরে বিপুল বিনিয়োগের পরও কোচ-ইঞ্জিন সংকটে চাহিদা অনুযায়ী যাত্রী সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোচ থাকলেও ইঞ্জিনের অপর্যাপ্ততায় ট্রেন সার্ভিস বাড়াতে পারছে না সংস্থাটি। অথচ সংকট কাটাতে একই ট্রেন দিয়ে একাধিক অতিরিক্ত ট্রেন সার্ভিস চালাতে পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের প্রস্তাবেও অনীহা দেখাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে টিকিটের (যাত্রী) চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে, যদিও সে অনুযায়ী টিকিট সরবরাহ করতে পারছে না রেলওয়ে। টিকিট সংকট মেটাতে রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পর তত্কালীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রতি রাতে আরো একটি তূর্ণা ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে পারেনি রেলওয়ে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সেবা বাস্তবায়নকারী বিভাগ অপারেটিং দপ্তর থেকে একাধিক পরিকল্পনা জমা দেয়া হলেও সেসব বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনীহা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুই জোড়া রেক দিয়ে চারটির পরিবর্তে ছয়টি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। টাইম টেবিল পর্যালোচনা পর দুটি ট্রেন দিয়ে চারটির পরিবর্তে ছয়টি ট্রিপ চালানোর বিষয়ে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের দপ্তরে পাঠায় রেলের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ। কিন্তু তাদের এ প্রস্তাব মহাব্যবস্থাপকের দপ্তরেই চাপা পড়ে যায়। ২০১৮ সালের মে মাসে প্রস্তাবটি পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক থামিয়ে দেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, রেলের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও ট্রেনে যাত্রীদের পর্যাপ্ত টিকিট প্রাপ্তির সুবিধার জন্য দুটি ট্রেন দিয়ে ছয়টি ট্রিপ চালানোর সুযোগ থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারণে পরিকল্পনাটি থেমে যায়। মূলত বাসমালিকদের সুবিধা দেয়া, সার্ভিস বাড়ানোর বিষয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অনীহার কারণে সুযোগ থাকলেও নতুন ট্রেন সার্ভিস হচ্ছে না।

রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিরতিহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে বেলা ৩টায় ছেড়ে রাত ৮টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছে। এরপর ট্রেনটি পরদিন ভোর ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাত্রী নিয়ে যায়। অর্থাৎ সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের রেকটি (একাধিক কোচের সমন্বয়ে গঠিত ট্রেন) ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট অলস বসে থাকে। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস বিকাল ৫টায় ছেড়ে রাত ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়। সোনার বাংলা ট্রেনের ওই রেকটি ৮ ঘণ্টা ৫০ মিনিট ঢাকায় বসে থাকে। অথচ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বিরতিহীন ট্রেনের রানিং টাইম প্রায় ৫ ঘণ্টা। ফলে এ সময়ে রেকগুলো দিয়ে আরো দুটি ট্রেন সার্ভিস চলতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন বিরতিহীনভাবে চলাচল করায় প্রতিটি ট্রেনেই মাসে গড়ে ১ কোটি ২০ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় হয়। এ হিসাবে দুটি ট্রেন থেকে বার্ষিক আয় হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন সার্ভিস চালুর সুযোগ না থাকায় বিদ্যমান ট্রেনগুলোকে রি-শিডিউল করলে সার্ভিস বাড়ানোর পাশাপাশি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে বলে ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে প্রতিদিনই যাত্রী সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ওই রুটে চলাচলরত যাত্রীদের ট্রেনের টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাত্রী চাহিদার কথা বিবেচনা করে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি রেক দ্বারা চারটির পরিবর্তে ছয়টি ট্রেন পরিচালনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ট্রেনের রেক দুটি পর্যায়ক্রমে ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম ওয়াশপিট করতে হবে। প্রস্তাবে স্বল্প রেক দিয়ে একাধিক অতিরিক্ত ট্রেন সার্ভিস পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বলবৎ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর থেকে অনুমোদন সাপেক্ষে প্রস্তাবটি মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের এ প্রস্তাব মহাব্যবস্থাপকের পক্ষ থেকে থামিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ওমর ফারুক বলেন, রেলের আয় বৃদ্ধি ও যাত্রী সেবা বাড়াতে বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছিল। দুটি ট্রেন দিয়ে ছয়টি ট্রিপ চালানো হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন ট্রেনের জন্য একটি রেককে প্রস্তুত করা ছাড়াও পাওয়ার কারের ওপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রস্তাবটি বিবেচনার পর ইঞ্জিন সংকটসহ একাধিক কারণে আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামীতে রেলের বহনে কোচ ও ইঞ্জিন যুক্ত হবে। তখন প্রস্তাবটি নতুন করে বিবেচনায় নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সুত্র:বণিক বার্তা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.