শিরোনাম

বর্ষায় রেলপথ আরও ঝুঁকিপূর্ণ

বর্ষায় রেলপথ আরও ঝুঁকিপূর্ণ

শিপন হাবীব:
জরাজীর্ণ রেললাইন ও সেতুর উপরে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। আর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় এই ঝুঁকির মাত্রা- এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

তাদের মতে, অতিবর্ষণ বা বন্যায় নড়বড়ে রেললাইনের নিচের মাটি নরম হয়ে যায়। এতে রেললাইন, পাথর ও স্লিপার সরে যায়। আর পানির তোড়ে দুই পাশের মাটি খসে যাওয়ায় প্রায় সময়ই দেবে যায় ব্রিজ। সবমিলিয়ে প্রতিমুহূর্তেই থাকে ট্রেনের লাইনচ্যুতি হওয়াসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা।

বিশেষজ্ঞদের আরও অভিমত, দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানে স্থায়ীভাবে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ অদ্যাবধি নেয়া হয়নি। যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখন তাৎক্ষণিকভাবে জোড়াতালি দিয়ে নামমাত্র সংস্কার কাজ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে এখনই টেকসই সংস্কার কাজ শুরু না করলে চলতি বর্ষায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ অধিকাংশ রেললাইন ও সেতুর অবস্থা খুবই নাজুক।

গত বর্ষা মৌসুমে পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন রেলপথের ব্রিজ পানির তোড়ে ভেসে গিয়েছিল। আর চলতি মৌসুমের শুরুতেই ঘটেছে নানা দুর্ঘটনা। বুধবার রাজশাহীর হালদাগাছিতে একটি তেলবাহী ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ২৮ ঘণ্টা। এছাড়া শুক্রবার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় পুংলী রেলসেতুর দুই পাশের মাটি দেবে যায়। এতে নয় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। অতিবর্ষণে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল হক শনিবার যুগান্তরকে জানান, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, এতে আমাদের আতঙ্কের পাশাপাশি উদ্বেগও বাড়ছে। এবার বর্ষা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম-ফেনী, চট্টগ্রাম-ষোলশহর-দোহাজারী, ষোলশহর-মাঝিরহাট, আখাউড়া-সিলেট, আখাউড়া-কুমিল্লা, রংপুরের কাউনিয়া-লালমনিরহাট, কাউনিয়া-রংপুর, রংপুর-পাবর্তীপুর, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম-পূর্ব, টঙ্গী-টঙ্গাইল রেলওয়ে এলাকাসহ প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার রেলপথ বিশেষ নজরে রাখছি। তিনি বলেন, রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা ‘বন্যা প্রতিরক্ষা মালামাল’ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছি। শুধু বন্যা নয়, টানা বৃষ্টিতে রেললাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। মাটি নরম হয়ে যায়, ফলে ব্রিজের দু’পাশ এবং লাইনের বিভিন্ন স্থান দেবে যায়।
তিনি বলেন, ২০১৭-২০১৮ সালে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় রেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাইলের পর মাইল রেললাইন পানির তোড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। স্লিপার, লাইন, পাথর সরে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় অর্ধশত ব্রিজ। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে চার মাসব্যাপী এসব লাইন মেরামত করা হয়েছে। ভারি বৃষ্টি এবং বন্যা স্থায়ী হলে এবারও এমনটা হতে পারে। তবে এবার যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন ও সেতু এলাকায় পর্যাপ্ত পাথর, লাইন এবং ব্রিজের জন্য রোন্ড স্টিল জয়েন্ট (আরএসজে) রাখা হয়েছে। যাতে দ্রুততম সময়ে মেরামত করা যায়।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খন্দকার শহিদুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে রংপুর বিভাগ রেলওয়ের বেশকিছু রেললাইন ও ব্রিজে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। একটি বিশেষ টিম মাঠে পর্যবেক্ষণ করছে। পানি সীমা অতিক্রম করলেই ট্রেন চলাচল বন্ধ করা দেয়া হবে।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন ঘেঁষে পানি বাড়ছে। সঙ্গে পানির স্রোত আছে। যার মধ্যে রংপুর বিভাগের কাউনিয়া-তিস্তা-মহেন্দ্রনগর, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, দিনাজপুর-বিবির বন্দর রেলওয়ে এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেন দুর্ঘটনাসহ জরাজীর্ণ লাইন, মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিজ নিয়ে এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে অতিবৃষ্টি ও বন্যা। এতে প্রতিমুহূর্তেই থাকতে হচ্ছে বেশ শঙ্কায়।

আরও জানা গেছে, রেলে বর্তমানে ৭৫ শতাংশ ইঞ্জিন-কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ। যার মধ্যে অধিকাংশের আয়ুষ্কাল একেবারেই শেষ। এছাড়া মোট ৩ হাজার ৬২৯টি রেলব্রিজের মধ্যে ৩ হাজার ২০০টিই ঝুঁকিপূর্ণ। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই ব্রিটিশ আমলে তৈরি। মোট সেতুর মধ্যে ৭৪টি গুরুত্বপূর্ণ, ৪২৪টি মেজর আর ৩ হাজার ১৩১টি মাইনর। জরাজীর্ণ লাইনের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিজে বাড়ছে আরও ঝুঁকি। ফলে নতুন ট্রেন, নতুন লাইন কিংবা সমাপ্ত হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পেও গতি পাচ্ছে না রেলের। ট্রেনের গতি দিন দিন কমছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ কিছু ব্রিজের ওপর দিয়ে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। ফলে ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলা কোচগুলো কোনো গতিই তুলতে পারছে না। পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে এ গতির কোচগুলো কিছুতেই চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা জানান, শুধু বর্ষা মৌসুম নয়, বছরজুড়েই রেল চলে ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় সারা দেশে বিদ্যমান নড়বড়ে রেলপথে সময়ে সময়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দেখার যেন কেউ নেই। কোনো দুর্ঘটনার পরপরই কিছু সময়ের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় কর্তৃপক্ষের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে’ গঠন করা হয় একের পর এক তদন্ত কমিটি। নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। দোষীদের সাব্যস্ত করে সমস্যা সমাধানে দেয়া হয় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা সুপারিশ। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন খুবই সামান্য। দায় নিতে চায় না কেউ। একে অপরকে দোষারোপ করেন সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। জরাজীর্ণ রেলপথ দিয়েই চলে ট্রেন।

সম্প্রতি কুলাউড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। গঠন করা হয়েছে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি। জমা পড়েছে দুই কমিটির প্রতিবেদন। কিন্তু তদন্ত কমিটির চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিরা আগের মতোই একে অপরকে দুষছেন। আর জোড়াতালি দিয়ে সেই আগের জরাজীর্ণ রেললাইন-সেতু দিয়ে শুরু হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ট্রেন চলাচল। একই চিত্র বিরাজ করছে সারা দেশের রেলপথে। কিন্তু এর মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। দীর্ঘ হচ্ছে দুর্ঘটনায় নিহত-আহতদের তালিকা। সাড়ে ১০ বছরে ৪ হাজার ৭৯৮টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৩৯২ জনের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রেলের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়হীনতা, রেলপথ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করা, আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পর ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া, সংশ্লিষ্ট কারও তেমন কোনো জবাবদিহিতা না থাকা এবং পদে পদে দুর্নীতির কারণেই মূলত গোটা রেলওয়েতে সৃষ্টি হয়েছে এই নাজুক পরিস্থিতির।

জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন জানান, বর্তমান সরকার রেলওয়েতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করছে। আমরা নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প যেমন গ্রহণ করছি, তেমনি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও করছি। কিন্তু এসব দুর্ঘটনার জন্য, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন বগির ত্রুটির জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল যথাযথ পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলা পাওয়া গেছে, তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কাউকেই রক্ষা করা হবে না। তিনি জানান, এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ১৫টি পয়েন্ট উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছেন। দুর্নিিত-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবাইকেই শাস্তি পেতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ভারত থেকে ২০টি ইঞ্জিন আনা হচ্ছে। এসব ইঞ্জিন বিনামূলে আমাদের দিচ্ছে, নতুন ইঞ্জিন এলে এসব ইঞ্জিন আবার ভারতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বিষয়ে তিনি বলেন, একে অপরকে দোষ দিলে লাভ হবে না। আমরা তদন্ত রিপোর্টগুলো এরই মধ্যে আমলে নিয়েছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি কুলাউড়ায় উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার দুটি রিপোর্ট রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর জমা দেয়া হয়েছে। বাকিটির রিপোর্ট কয়েক দিনের মধ্যে রেল সচিব বরাবর জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান আঞ্চলিক তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক। তার স্বাক্ষরিত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে জরাজীর্ণ রেললাইনের জন্য। লাইনের বিভিন্ন স্থানে হুক-ক্লিপ, নাট-বল্টু খোলাসহ নড়বড়ে ছিল ফিসপ্লেট-স্লিপারও। সর্বোপরি রেলপথ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট এসএসএই/ওয়ে ও মেট দায়ী। একই সঙ্গে প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. ময়েনুল ইসলাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক। তার স্বাক্ষরিত রিপোর্টেও একই চিত্র উঠে এসেছে।

এছাড়া এ রিপোর্টেই উঠে এসেছে, ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গর্ভনমেন্ট ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ের (জিআইবিআর) বাৎসরিক একটি পরিদর্শক দল কুলাউড়া রেল সেকশন পরির্দশন করে ভয়াবহ প্রতিবেদন দেয় রেলকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এ সেকশন রেললাইনে পাথরের স্বল্পতাসহ ট্র্যাকে প্রচুর ঘাস রয়েছে। ট্র্যাকের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। অধিকাংশ স্থানেই অ্যালাইনমেন্ট ঠিক নেই। ১০-১২ বছর ধরে এ সেকশনে কোনো টেম্পিং করা হয়নি। টেম্পিং এবং ট্র্যাকের অ্যালাইনমেন্টসহ জরাজীর্ণ লাইনের যথাযথ কাজ না হওয়া পর্যন্ত ওই সেকশনে সব ট্রেন গতি কমিয়ে চালাতে হবে। ওই প্রতিবেদনের প্রায় ১ বছর পরও জরাজীর্ণ সেকশনটি উন্নীত করা হয়নি। এমন অবস্থা শুধু আখাউড়া-সিলেট রেলপথেই নয়, পুরো রেলপথেই বিরাজমান।

এদিকে জমা পড়া দুই তদন্ত রিপোর্টেই ‘ভিন্নমত’ প্রকাশ করে যুক্তিখণ্ডন করেছেন প্রকৌশল বিভাগের দুই কর্মকর্তা। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিল ও ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মো. আহসান জাবিরের দেয়া প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি ট্রেনকে দায়ী করা হয়েছে। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া ইঞ্জিন-কোচ দ্বারা ট্রেন চালানোর কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। লাইনের জন্য নয়, লাইন ঠিকঠাকই ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত কোচ জীর্ণশীর্ণ মরিচা পড়া ও পুরনো ভাঙা ছিল। কোচগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উভয় পক্ষের রিপোর্টেই রেলের নাজুক পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র বেড়িয়ে এসেছে। এতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে- জরাজীর্ণ লাইনের ওপর চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে ট্রেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক যুগান্তরকে জানান, দেশে রেলপথ হওয়ার কথা সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু তা না হয়ে রেলপথ হয়ে উঠছে চরম ঝুঁকির। রেলের প্রতিটি নাটবল্টু, পাত, ফিসপ্লেট, ক্লিপসহ রেললাইন নির্মাণের সময় যেমন থাকে, তেমনি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে তা একই মানের রাখা জরুরি। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। জরাজীর্ণ রেললাইন, ব্রিজ মাসের পর মাসও মেরামত করা হচ্ছে না। তাই ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুতি বা দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইন, ব্রিজগুলো হয়ে উঠছে একরকম ‘মরণফাঁদ’। পুরো রেলব্যবস্থাকে যথাযথভাবে ঠিকঠাক না করা হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়বে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এলেই এ রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, রক্ষণাবেক্ষণে ব্যক্তিগত প্রাপ্তি নেই, প্রকল্পে সেটা আছে। তাই বড় প্রকল্পে মনোযোগ বেশি। মাঠপর্যায়ে লাইন, সেতু মেরামতে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে রেলে বর্তমানে যে সম্পদ আছে, তা দিয়েই যাত্রীসেবা পরিবহন ও সেবা কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। শুধু কেনাকাটায় টাকা খরচ না করে তাই রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে।

রেলওয়ে সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, রেলপথ ও সেতু ঝুঁকিপূর্ণ- এমনটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু কুলাউড়া ট্রেন দুর্ঘটনার পর উভয়পক্ষের তদন্ত রিপোর্ট থেকে সে রকমই ভয়ংকর তথ্য উঠে আসছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এরই মধ্যে জরাজীর্ণ রেলপথ ও সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এসব ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন ও সেতু মেরামতের জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে মেরামতের কাজও চলছে। তিনি বলেন, বর্ষার সময় রেললাইন ও সেতু আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে, এজন্য আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন সেকশনে উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আরও নতুন ইঞ্জিন ও কোচ এলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও কোচ বাতিল করা হবে।

সুত্র:যুগান্তর, ১৪ জুলাই ২০১৯,


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.