তৌফিকুল ইসলাম :
নতুন রেললাইন তৈরি এবং পুরনো রেললাইন সংস্কারের অন্যতম উপাদান হলো স্লিপার। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি রেলওয়ে কংক্রিট স্লিপার কারখানা রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজারে। বর্তমানে পাথর সঙ্কটের কারণে গত ১১ মাস যাবত উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এই কংক্রিট স্লিপার কারখানায়।
ছাতক রেলস্টেশনের পাশেই এই কারখানাটি গড়ে উঠেছিল দীর্ঘদিন আগেই। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এর আগেও একাধিকবার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির। গত বছরের ১৯ মার্চ থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কারখানাটির।
এদিকে আরও জানা যায়,কনক্রিটের স্লিপার তৈরির মূল উপাদান হচ্ছে পাথর। তাছাড়াও যে সব কাঁচামাল লাগে- ইস্পাতের রড ও পাত, যা আমদানি করা হয় ভারত থেকে। এর সঙ্গে ছাতক সিমেন্ট কারখানার বিশেষ সিমেন্ট ও পাশের উপজেলার ভোলাগঞ্জের পাথর, বালু ব্যবহার করে তৈরি করা হতো উন্নতমানের কংক্রিটের স্লিপার। তবে বর্তমানে পাথর সঙ্কটে একেবারেই বন্ধ উৎপাদন কারখানাটির।
![](https://imaginary.barta24.com/resize?width=700&quality=75&path=uploads/news/2020/Feb/15/1581747182939.jpg)
উৎপাদন বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাতক রেলওয়ে কংক্রিট স্লিপার কারখানার দায়িত্বে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী ভারপ্রাপ্ত আব্দুর নুর বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এ কারখানাটি চালানোর জন্য আমাদের সব ধরনের কাঁচামালসহ প্রস্তুতি আছে। শুধুমাত্র পাথর সংকটের কারণে আমরা উৎপাদনে যেতে পারছি না। আমরা যে মানের পাথর নিয়ে থাকি তা একসময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে রোপওয়ে দিয়ে তা নিয়ে আনা হতো। কিন্তু বহু বছর ধরে সেখানেও পাথর মিলছে না। ফলে আমদানি করতে হচ্ছে পাথর।
এই প্রকৌশলী বার্তা২৪.কমকে আরও বলেন, উৎপাদনে যাওয়ার জন্য, পাথর সাপ্লাই দেওয়ার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই মাসের ১০ তারিখে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল তবে সেটি হয়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ঠিকাদার নিয়োগ দিলেই পাথর সাপ্লাই হলেই উৎপাদন শুরু হবে কারখানাটিতে।
এদিকে গত রোববার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে কংক্রিট স্লিপার কারখানা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, রেল যেন সবসময় আপনাদের পাশে থাকতে পারে, সেজন্য আমরা সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াবো। রেলের এ ধরনের যেসব কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো আমরা পুনরায় চালু করবো।
![](https://imaginary.barta24.com/resize?width=700&quality=75&path=uploads/news/2020/Feb/15/1581747447315.jpg)
স্লিপার কারখানা বন্ধ, তাহলে এখন কংক্রিট স্লিপার কোথা থেকে আসছে- জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, রেল লাইনের কংক্রিটের স্লিপার বেসরকারিভাবে জামালপুর এবং বুড়িমারী থেকে নিয়ে আসা হয়। তাছাড়া ভারত থেকেও কিছু আমদানি করা হয়। ছাতকে আমাদের যে কারখানাটি আছে সেটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সেটিও চালু করা হবে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কিছুটা কম হয় এই কারখানায়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমেরিকার রেললাইনে দেখেছি সেখানেও কাঠের স্লিপার ব্যবহৃত হচ্ছে এখনো। আমি মনে করি কংক্রিটের স্লিপারের চেয়ে কাঠের স্লিপারের স্থায়িত্ব বেশি হয়।
![](https://imaginary.barta24.com/resize?width=700&quality=75&path=uploads/news/2020/Feb/15/1581747222593.jpg)
কংক্রিটের স্লিপারের বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কাঠের স্লিপারের তুলনায় কংক্রিটের স্লিপারের স্থায়ীত্ব বেশি হয় রেললাইনে। কংক্রিটের স্লিপার রেললাইনে ব্যবহার করলে করলে ভাইব্রেশনটা কম হয়। উন্নত বিশ্বে এই দুই ধরনের স্লিপারই ব্যবহৃত হয়। তবে কাঠের ক্ষেত্রে উন্নত মানের কাঠের স্লিপার তারা ব্যবহার করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকায় ছাতক রেলস্টেশনের পাশেই প্রায় ছয় একর জমির ওপর কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি স্থাপন করে রেলওয়ে। ১৯৮৮ সালের মে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এবং পরে ২৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এ কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়।
সুত্র: বার্তা২৪.কম, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০