শিরোনাম

দ্রুত আয়ু হারাচ্ছে রেলের ওয়াগন

দ্রুত আয়ু হারাচ্ছে রেলের ওয়াগন

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) নিয়মিত কনটেইনার পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সাধারণত একটি ২০ ফুট কনটেইনারে সর্বোচ্চ ৩০ টন ও ৪০ ফুট কনটেইনারে ৩০ দশমিক ৫ টন পণ্য পরিবহন করা হয়। তবে চট্টগ্রাম-ঢাকা আইসিডির মধ্যে চলাচল করা বিএফসিটি ওয়াগনগুলোতে নিয়মিত পরিবহন করা হচ্ছে এর চেয়ে বেশি পণ্য। এতে কনটেইনার পরিবহনের ওয়াগনগুলোতে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি। দ্রুত কমে যাচ্ছে অর্থনৈতিক আয়ু। এমন পরিপ্রেক্ষিতে কনটেইনার শিপিং এজেন্টদের নির্ধারিত ওজনসীমার মধ্যেই পণ্য পরিবহনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সব মিলিয়ে ১৩৯টি অতিরিক্ত ওজনের কনটেইনার পরিবহন করা হয়েছে। প্রতি মাসেই এ রকম হারে অতিরিক্ত ওজনের কনটেইনার পরিবহন করছে সংস্থাটি। যেসব কনটেইনারের ওজন নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি, সেগুলো পরিবহনের ক্ষেত্রে কনটেইনার শিপিং এজেন্টদের রেলওয়ের কাছে আবেদন করতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ের সিএমই (পূর্ব) সিওপিএসের (পূর্ব) অনুমোদন দেয় সেগুলো পরিবহনের।

বর্তমানে রেলওয়েতে লোকোমোটিভ ও রোলিংস্টকের সংকট থাকায় ওভারওয়েট কনটেইনার পরিবহন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সাধারণ কনটেইনার ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে পৌঁছতে সময় নেয় ১২-১৩ ঘণ্টা।  কিন্তু কনটেইনারের ওজনসীমা বেশি হলে প্রয়োজন হয় বিশেষ ট্রেনের। অতিরিক্ত ওজনবাহী কনটেইনার ট্রেনটির নম্বর ৬০৯। এ ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। পাশাপাশি রাতের বেলা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কম গতি আর রাতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অতিরিক্ত ওজনবাহী একটি কনটেইনার ট্রেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে পৌঁছতে তিনদিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওভারওয়েট কনটেইনারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। টানা ওভারওয়েট কনটেইনার পরিবহনের কারণে রেলওয়ের ৯৪ সিরিজের বিএফসিটি ওয়াগনের আন্ডার গিয়ার ফিটিংসে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বাড়ছে যান্ত্রিক ত্রুটি। দ্রুত কমে যাচ্ছে আয়ুষ্কাল। একই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিক্সা) চেয়ারম্যান বরাবর আনুষ্ঠানিক একটি চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) এএমএম শাহনেওয়াজ। চিঠিতে তিনি শিপিং এজেন্টদের ৪০ ফুট কনটেইনারে ৩০ দশমিক ৫ টন এবং ২০ ফুট কনটেইনারে ৩০ টনের মধ্যে ওজন সীমিত রেখে পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

১৯৮৭ সাল থেকে কনটেইনার পরিবহন শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডির (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) মধ্যে কনটেইনার পরিবহন করছে সংস্থাটি। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিএফসিটি কনটেইনার আছে ৪৬৬ ইউনিট। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৭ লাখ ৪২ হাজার টন কনটেইনার পরিবহন করেছিল রেলওয়ে। পরের অর্থবছর (২০১৭-১৮) কনটেইনার পরিবহন কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮১ হাজার টনে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলে ৭ লাখ ৬ হাজার টন কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে যত কনটেইনার পরিবহন হয়, তার মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ রেলপথে পরিবহন হচ্ছে।

কনটেইনার পরিবহনকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে ২০১৬ সালের ১৭ মে সিসিবিএল প্রতিষ্ঠা করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সুপারিশে ভারতের কনটেইনার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (কনকর) আদলে গড়ে তোলার কথা সংস্থাটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠার চার বছর পার হলেও সিসিবিএল কোনো কাজই করতে পারেনি। রেল ভবনে কোম্পানিটির জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র দুটি কক্ষ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকলেও কোম্পানি সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চুক্তিতে। কোনো জনবলও নেই। এখন পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহন পরিচালনাও শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.