শিরোনাম

নিরাপদ ও নারীবান্ধব ট্রেনযাত্রা

নিরাপদ ও নারীবান্ধব ট্রেনযাত্রা

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। অথচ দুঃখজনক, বিভিন্ন পরিবহনে তাহাদের জন্য যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নাই। বিশেষ করিয়া ট্রেনে যাতায়াতের সময় নারীরা নানা সমস্যা ও বিড়ম্বনার শিকার হন। তাহাদের পুরুষদের সহিত গা েঁঘষিয়া দাঁড়াইয়া বা বসিয়া যাতায়াত করিতে হয়। ইহাতে তাহারা প্রায়শ নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। গত বৃহস্পতিবার রাত্রে আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে চলন্ত অবস্থায় টয়লেটে এক স্কুলছাত্রীকে বলাত্কারের অভিযোগ উঠিয়াছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে এই ঘটনা ঘটে। যদি ট্রেনে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকিত, তাহা হইলে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যাইতো। তাই নারীদের জন্য ট্রেনযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করা জরুরি।

আশার কথা হইল, এইবারের ২০১৯-২০ জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে রেলপথে নারীসেবা নিশ্চিত করিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ সুপারিশ করা হইয়াছে। শীঘ্রই এইসব সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হইবে বলিয়া রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়াছে। এইসব সুপারিশের মধ্যে রহিয়াছে- আন্তঃনগর, মেইল বা লোকাল সব ট্রেনে নারীদের জন্য আলাদা কোচ বা বগি সংযুক্ত করা, সব ট্রেনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার তথা শিশুসন্তানদের স্তন্যপান করানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা, তাহাদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা, তাহাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। জানা যায়, আশির দশকে চলা ট্রেনগুলিতে নারীদের জন্য আলাদা কোচসহ বিশেষ ব্যবস্থা ছিল; কিন্তু ১৯৮৮ সালে আন্তঃনগর ট্রেন সংযুক্ত হইবার পর এইসব সুবিধা বাতিল করা হয়। কেন বাতিল করা হয় তাহা বোধগম্য নহে। তবে ২০১১ সালে পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় করিবার পর বিষয়টি নিয়া আবার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়; কিন্তু এতদিনেও তাহা বাস্তবায়িত না হওয়াটা হতাশাজনক। অবশ্য বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলা একটি লোকাল ট্রেনে নারীদের জন্য পৃথক কোচ রহিয়াছে। দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে চলমান জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেনেও পৃথক কোচ যুক্ত হইবার কথা রহিয়াছে। তবে বর্তমানে যেখানে ৩৫৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে, সেখানে এই এক-দুইটি ট্রেন নারীবান্ধব হইলে চলিবে না। বিশেষত যে ৯৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে, সেইখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নারীদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।

পৃথক কোচ ছাড়াও প্রতিটি বগিতে নারীদের জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা উচিত। নারীশিক্ষায় জাগরণ সৃষ্টি হইবার কারণে আমাদের দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়িতেছে; কিন্তু পথে-ঘাটে তাহাদের অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার অন্ত নাই। তাহাদের এইসব অধিকার আদায়ে সরকারের বিশেষ নজর দিবার সময় আসিয়াছে। বিশেষ করিয়া প্রতিটি ট্রেন, বাস, লঞ্চ স্টেশন ও বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত নারী নিরাপত্তাকর্মী নিশ্চিত করা দরকার। তাহাদের জন্য বাড়ানো দরকার বিশ্রামাগার ও টয়লেট। ঢাকা শহরের আশেপাশের জেলাগুলি হইতে অনেক নারী যাত্রী রাজধানীতে আসিয়া অফিস-আদালত শেষ করিয়া ঐ দিনই বাড়িতে ফিরিয়া যাইতেছেন। তাহাদের জন্য ট্রেনযাত্রায় সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা আবশ্যক। দুই-এক বত্সরের মধ্যে বেশকিছু আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ আনা হইবে বলিয়া জানা যায়। এইসব কোচে পরিকল্পনা মাফিক নারীদের জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করিতে হইবে।

সুত্র:ইত্তেফাক, ২৩ জুন, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.