শিরোনাম

ঋণের শর্ত মেনে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি কাম্য নয়

ঋণের শর্ত মেনে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি কাম্য নয়

উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে ঋণের শর্ত কঠিন হবে, সুদহার তুলনামূলক বেশি এবং অর্থ পরিশোধের সময়সীমাও কমবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এত দিন সহজ শর্তে ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত থাকবে। কঠিন শর্তের ঋণ নেয়া মানে দেশের সক্ষমতা বেড়েছে। সব সময় সহজ শর্তে ঋণ-অনুদান নেয়া গর্বের বিষয় নয়। দেশ উন্নত হওয়ায় সক্ষমতা বাড়বে, বেড়েছেও। সেক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধা পেতে তারা বেশি ব্যয়ও করতে পারবে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়লে জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। মাথাপিছু আয় বাড়লে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই সুযোগে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কঠিন শর্ত আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেবে। যেমনÑএশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের শর্ত হিসেবে রেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ে রিফর্ম প্রকল্পের আওতায় ভাড়া বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে এডিবি। ঋণের এমন শর্ত প্রত্যাশিত নয়।

খবরে জানা যায়, রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০১৬ সালে। এরপর থেকে একই ভাড়ায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে। তবে এ সময় পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে রেলের লোকসানের বোঝা। তাই লোকসানের ঘাটতি পোষাতে বাড়াতে হবে রেলের ভাড়া এমনই শর্ত ছিল এডিবি’র।

আশার কথা, ভাড়া বৃদ্ধির শর্তে ভবিষ্যতে ঋণ নিতে রাজি নয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তে অনড় থাকা উচিত। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিত করে রেলের আয় বাড়িয়ে যদি ঋণ পরিশোধ করা যায়, সেটিকেই বরং স্বাগত জানানো উচিত এডিবির।

কীভাবে ঋণ পরিশোধ করা হবে, এটি ঋণগ্রহীতা দেশের নিজস্ব বিষয়। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তা ছাপিয়ে দিতে পারে না। যাত্রীভাড়া না বাড়িয়ে অন্য উপায় অবলম্বন করতে পারে ঋণগ্রহীতা। আমাদের রেলে যে সম্পদ আছে, সেটির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনাকাটায় দুর্নীতি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচে অপচয় ও তেল চুরি রোধ করে অর্থ সাশ্রয় করতে পারে।

সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব আসতে পারে। কিন্তু প্রথমেই ভাড়া বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত নয়। এটি করা হলে দুর্নীতি, অপচয়, পদ্ধতিগত লোকসান গৌণ হয়ে যায়। স্বচ্ছতা, সুশাসন ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা গেলে রেলের আয় বাড়বে। তারপর প্রয়োজন হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। এডিবির ঋণের শর্ত হিসেবে ‘ভাড়া বাড়ানো’র প্রস্তাব অনেকেটা অবমাননাকরও। স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারকে সম্মান করা উচিত উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর। আমরা কোনোভাবেই ভাড়া বৃদ্ধির বিপক্ষে নই। সব বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আরও ঋণ নিতে হতে পারে। তা যথাসময়ে পরিশোধের নিশ্চয়তা পেলেই হলো, শর্ত কঠিন হোক; কিন্তু কোনো অসম্মানজনক শর্তে ঋণ নেয়া সমীচীন হবে না।

সূত্র:শেয়ার বিজ, মার্চ ২৫, ২০২১


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.