মো. আমিরুজ্জামান :
কালের সাক্ষী এবং রেলওয়ের ঐতিহ্যের স্মারক প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচটি জাদুঘরে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এটি দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপে রাখা হয়েছে। ঐ ক্যারেজে ব্রিটেনের রানিসহ পদস্থ কর্মকর্তারা ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করেছেন বলে কিংবদন্তি আছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে বিলাসবহুল ঐ প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচটি ভারতে আনা হয়। এর লোগোতে লেখা রয়েছে সেলুনটি ১৯২৭ সালে ব্রিটেনের একটি কারখানায় তৈরি। মূলত ব্রিটেনের রানি ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য ঐ সেলুনটি এখানে বয়ে আনেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ২৮ জুন তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েকে (পিইআর) ঐ সেলুনটি উপহার হিসেবে দিয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার। এর নম্বর ১২৬৫।
অনুরূপ একটি সেলুন ভারতীয় রেলওয়েকেও দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গেলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ (এসএসএই) মো. নিজামুল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, স্বাধীনতার পরে দেশের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ঐ প্রেসিডেন্ট সেলুনে ভ্রমণ করেছেন। পরে ১৯৮১ সালে তা অকেজো হয়ে পড়লে সৈয়দপুর কারখানায় নিয়ে আসা হয়। সেলুনটির উল্লেখযোগ্য দিক হলো তা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। এর অভ্যন্তরে রয়েছে প্রেসিডেন্টের শয়নকক্ষ, তার স্টাফদের জন্য পৃথক দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও এর কর্মচারীদের জন্য পৃথক একটি কক্ষ। আরো আছে বিলাসবহুল বাথরুম। এতে আছে হাই কমোড, বেসিন, বাথটাব ও শাওয়ার। এছাড়াও আছে সভা করার জন্য একটি কনফারেন্স রুম। সাধারণ কোচে আটটি চাকা থাকলেও সেলুনটিতে রয়েছে ১২টি চাকা। এর আসবাবপত্র বৈদ্যুতিক ফিটিংস সবই আধুনিক এবং এখনো কার্যকর। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা জানান, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট সেলুনটির প্রয়োজনীয় মেরামত হচ্ছে। আমি এটা পরিদর্শন করেছি। সেলুনটি রেলওয়ে ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী প্রজন্ম এ থেকে রেলের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। এসব কথা ভেবেই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় প্রস্তাবিত রেলওয়ে জাদুঘরে তা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাদুঘরটি সহসাই উদ্বোধন হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র:ইত্তেফাক, ২৯ আগস্ট, ২০২০