শিরোনাম

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গোয়ালন্দ ঘাটে ট্রেন চলাচল


।। নিউজ ডেস্ক ।।
ধিরে ধিরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গোয়ালন্দ ঘাটের ট্রেন চলাচল, এতে বিপাকে দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের মানুশ। বেসরকারিভাবে পরিচালিত একটি মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন দিয়ে কোনোরকম চলছিল গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া) স্টেশনটির কার্যক্রম। এই দুইটি ট্রেনের মধ্যে বন্ধ হচ্ছে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি। ০১ নভেম্বর থেকে খুলনা থেকে গোয়ালন্দঘাটের পরিবর্তে খুলনা-ঢাকা রুটে পদ্মাসেতু হয়ে চলাচল করবে এই ট্রেনটি। এতে গোয়ালন্দ ঘাটের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এদিকে শিলিগুড়ি নামে পরিচিত ৫১৩ নম্বরের লোকাল ট্রেনটি প্রায় এক যুগ ধরে এ রুটে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে রেলওয়ের দুই স্টেশনের মধ্যে গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনটি ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। জনবল-সংকটে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আন্তঃনগর দুটি ট্রেন প্রত্যাহারের পাশাপাশি অন্য একটি লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াতের অন্যতম প্রবেশধারখ্যাত রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট। আর এই দৌলতদিয়া ঘাটে অবস্থিত গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনটি এখন ট্রেনের সংকটে ধুঁকছে।

রেলওয়ের গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট-খুলনা-রাজশাহী রেলপথের গোয়ালন্দ বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। সেখানে স্টেশন মাস্টার পদে এক জন, সহকারী স্টেশন মাস্টার একজন, পয়েন্টসম্যান তিন জন এবং গেটম্যান (পাহারাদার) দুজনসহ সব পদে প্রয়োজনীয় লোকবল ছিল। প্রতিদিন ঐ স্টেশন থেকে বিভিন্ন ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করত এলাকার হাজারো মানুষ। পরে সব পদ শূন্য হয়ে পড়ায় রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনটি গত ৬ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।

এদিকে উপজেলার দৌলতদিয়ায় অবস্থিত রেলওয়ের গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন। দুটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রত্যাহারের পাশাপাশি অন্য একটি লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ব্যস্ততম ঐ স্টেশনটি এখন ট্রেনের সংকটে ধুঁকছে। রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনের পথে নিয়মিত চলাচল করত মধুমতী এক্সপ্রেস নামের আন্তঃনগর ট্রেন। আগের ঘোষণা ছাড়াই ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থানান্তর করা হয়। এর আগে খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাটের পথে চলাচলকারী তিতুমীর এক্সপ্রেস নামের অন্য আন্তঃনগর ট্রেনটি প্রত্যাহার করে রাজশাহী-চিলাহাটি স্টেশনের পথে স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে গোয়ালন্দ ঘাট-পার্বতীপুর পথে নিয়মিত চলাচল করত শিলিগুঁড়ি নামের পরিচিত অন্য একটি লোকাল ট্রেন।

রেলওয়ের ৫১৩ নম্বর ঐ লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন মালপত্র আনা-নেওয়া করতেন। পরে ইঞ্জিন ও বগির সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে লোকাল ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে ট্রেনটির চলাচল।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া) রেলওয়ে স্টেশনের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান (৭০) বলেন, ‘আমি ৪০ বছর যাবত দৌলতদিয়া রেল স্টেশনে হোটেল ব্যবসা করে আসছি। এখন স্টেশনে আগের তুলনায় লোকসমাগম কম। ব্যবসা-বাণিজ্য নাই বললেই চলে, তার পরও দুটি ট্রেনের যাত্রীদের আশায় হোটেল খুলে বসে থাকি। এখন যদি মেইল ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদেরকে হোটেল বন্ধ করে বেকার হয়ে বাড়িতে বসে থাকতে হবে।’

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা (৭০) বলেন, ‘শিলিগুঁড়ি নামের লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পার্বতীপুর থেকে গোয়ালন্দ ঘাট রেলপথ এলাকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। রেলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে পরিবহণে মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এ রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত শতশত শ্রমিক শ্রেণির মানুষ কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছে। ছিল মাত্র দুটি ট্রেন, তার মধ্যে যদি মেইল ট্রেন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে গোয়ালন্দ ঘাট এলাকার শতশত মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এমনিতেই পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাটে আর আগের মতো লোকসমাগম নাই।’

রেলওয়ের গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া) স্টেশন মাস্টার আব্দুল জলিল বলেন, বর্তমান এই স্টেশনে একটি নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন ও একটি (সাটল) লোকাল ট্রেন চালু রয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি রুট পরিবর্তন করে খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাটের পরিবর্তে খুলনা-ঢাকা রুটে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। শুধু সাটল (লোকাল) ট্রেনটি এই রুটে চলাচল করবে।

সূত্রঃ ইত্তেফাক


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।