শিরোনাম

চার মাস ধরে বন্ধ নারাওয়ঞ্জ-ঢাকা রুট, ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কায় ঘরমুখো মানুষ


।। নিউজ ডেস্ক ।।
আর কিছুদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদে সড়কপথে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়বে। অথচ নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে চার মাসেও ট্রেন সার্ভিস চালু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল-সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতুর রেল-সংযোগ সড়কের কাজ শেষ দিকে রয়েছে। তবে কবে নাগাদ নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে রেল সার্ভিস চালু করা হবে, তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনে সেই চিরচেনা ভিড় নেই। প্ল্যাটফর্মে কয়েকজন লোক বসে আছেন। চা-পান ও অন্যান্য দোকান খোলা রয়েছে, তবে ক্রেতা কম। স্টেশনের চায়ের দোকানি রফিকুল জানিয়েছেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে জনসমাগম কমে গেছে। এ জন্য বেচাকেনা কম হচ্ছে।

কমলাপুর যাওয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে এসেছেন ছগির মিয়া। তিনি বলেন, ‘ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে এটি জানা ছিল না। ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকায় বাসে ঢাকায় যেতে হবে। তবে বাস ভাড়া অনেক বেশি। বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৫৫ টাকা, যেখানে ট্রেনের ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। এ ছাড়া বাসে যেতে হলে যানজটের ভোগান্তি রয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজট ঠেলে ঢাকায় যেতে অনেক সময় লেগে যায়। তবে ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ কীভাবে যাবো, বুঝতে পারছি না। তখন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যানজট।’

দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা কাইয়ুম আলী বলেন, ‘ট্রেন সার্ভিস গরিব মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম। ট্রেনের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, সেখানে এখন বাস ভাড়া ৫৫ টাকা। এই সার্ভিসের ওপর সবার নজর পড়েছে। এ কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে ট্রেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে কেন ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রাখা হলো, তার উত্তর কেউ দেয় না। প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ যাত্রী ট্রেনে ঢাকায় যেতেন। এবার যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। সেইসঙ্গে বেশি ভাড়া গুনতে হবে।’

নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার, কবির হোসেন ও মোসলেম উদ্দিন জানিয়েছেন, ময়মনসিং, রংপুর, দিনাজপুর ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এই রুট দিয়ে চলাচল করে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার ট্রেন ধরতে এই রুটে যাত্রীরা চলাচল করেন। কারণ ট্রেনে যানজটে পড়তে হয় না। এ ছাড়া ভাড়াও কম। এ জন্য এই রুটে ট্রেন সার্ভিস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু চার মাস ধরে ট্রেন বন্ধ থাকায় গণপরিবহনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ছয়লেনের উন্নীতকরণ কাজের জন্য প্রায় সময় সড়কে যানজট লেগে থাকে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।

স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ভ্যারাইটিজ পণ্যের দোকানি আইয়ুব আলী বলেন, ‘ট্রেন সার্ভিস বন্ধ হলেও এখনও অনেক যাত্রী ট্রেনের খোঁজ করে ফিরে যান। তবে এই ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকার ফলে আমাদের বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। আমাদের দোকানের ক্রেতাদের একটা বড় অংশ হচ্ছে ট্রেনযাত্রী।’

নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দুই ঈদ ঘিরে দৈনিক নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ঈদের আগের ১০ দিন থেকে ট্রেনে তিলধারণের জায়গা থাকে না। এমনকি ট্রেনগুলোর ছাদ পর্যন্ত পূর্ণ থাকে। কম ভাড়া ও সময় কম লাগায় স্বস্তিতে যাতায়াত করেছিলেন যাত্রীরা। এখন যাত্রীদের বাসে ও বিভিন্ন পরিবহনে যেতে হয়। নিম্ন ও মধ্যমআয়ের যাত্রীরা সাধারণত ট্রেন সার্ভিস নেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন চার গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

কবে ট্রেন চালু হবে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের মাস্টার কামরুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর রেল-সংযোগ কাজের জন্য এই সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ দিকে। আশা করছি, শিগগিরই নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ট্রেন সার্ভিস চালু হবে। তবে কবে নাগাদ ট্রেন চালু হবে, তা আমাদের জানায়নি কর্তৃপক্ষ। ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকায় আমাকে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে রেল সার্ভিস চালু হলে পুনরায় এখানে দায়িত্ব দেবে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিদিন আটটি করে ১৬টি ট্রেন এই রুটে চলাচল করতো উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে আট থেকে ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতেন। ঈদের আগে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকতো। ওই সময় দিনে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী হতো। এবার ঈদে ভোগান্তিতে পড়বেন যাত্রীরা।’

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.