শিরোনাম

উদ্বোধনের আগেই বিধ্বস্ত স্বপ্নের রেললাইন


।। নিউজ ডেস্ক ।।
আকস্মিক পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলা সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-চন্দনাইশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) থেকে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত টানা তিনদিনে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। ওই এলাকার স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় রোববার পর্যন্ত শিশু বৃদ্ধসহ মোট ১৭ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে।

আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার এই রেললাইনের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। তবে এই টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেবে গেছে এই রেললাইনের কিছু অংশ। অনেক জায়গা থেকে সরে গেছে পাথর, খুলে গেছে রেলবিট। তবে এক বন্যাতেই ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রেললাইনের বিপর্যয়কে নির্মাণ কাজের কারিগরি ত্রুটি বলে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে বন্যার পেছনে এই রেললাইনকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। রেলপথের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় সরে গেছে পাথর। যে কারণে নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেললাইন উদ্বোধন করা যাবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, যদিও বন্যার এ ক্ষয়ক্ষতি যথাসময়ে ট্রেন চালুর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে বন্যার কারণে সাতকানিয়া উপজেলার তেমুহনী মৌজায় আধ-কিলোমিটারের মতো অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পানির ঘূর্ণির কারণে রেললাইনের নিচের মাটি ক্ষয়ে গেছে। এগুলো ঠিক করার জন্য আলাদা টিম কাজ করবে। মূল প্রকল্পের সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত নয়। প্রকল্পের কাজও চলবে আবার একইসঙ্গে মেরামতও চলবে। সুতরাং যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, রেললাইনে বন্যা হবে এটি স্বাভাবিক বিষয়। সিলেট অঞ্চলে প্রায় সময় বন্যা হয়। ওই রোডে ট্রেন চলে না? তাছাড়া কক্সবাজার অংশে জলোচ্ছ্বাস হবে এই চিন্তা থেকে রেললাইন এমনিতে উঁচু করা হয়েছে। এটি মাটি থেকে প্রায় ২০ ফুট উঁচু। তবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অংশে এবার পাহাড়ি ঢল নেমেছে। এরকম পানি স্বরণকালে হয়নি। প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির সময় অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন যেহেতু এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে প্রয়োজনে রেললাইনের বিশেষ অংশ আরও উঁচু হবে।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, রেললাইনে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক। তিনি জানান, যদি এমন হতো তাহলে রেললাইনের একপাশে পানি থাকত অন্যপাশে তো থাকত না। কিন্তু এখন রেললাইনের দুপাশেই পানি রয়েছে।

জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৮ সালে ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুনে। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.