শিরোনাম

তিন সিগন্যাল মানেনি তূর্ণা

তিন সিগন্যাল মানেনি তূর্ণা

নিউজ ডেস্ক:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে। ১০টি কারণ সামনে রেখে পাঁচটি কমিটি তদন্ত করছে। একটি কমিটির এক সদস্য জানান, তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের চালক সিগন্যাল না মানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসছে। পরপর তিনটি সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ কমিটির মধ্যে তিনটি রোববার প্রতিবেদন জমা দেবে। বাকি দুটির আরও ৭-৮ দিন লাগতে পারে।

সোমবার রাতে মন্দবাগে উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ১৬ যাত্রী নিহত হন। এ দুর্ঘটনা তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলোর সদস্যরা ঘটনাস্থলের সার্বিক চিত্র খতিয়ে দেখছেন। আহত যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পূর্ব) মো. নাসির উদ্দিন জানান, চালকের ভুলের পাশাপাশি সিগন্যালের ত্রুটি ও আবহাওয়াসহ ১০টি কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের তদন্ত দলের প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থলের সিগন্যাল, রেললাইনের ত্রুটি, সার্ভার লাইন, কন্ট্রোল বক্সসহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেন। মিতু মরিয়ম জানান, স্টেশনে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মো. খলিলুর রহমান মণ্ডলের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। আহত যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তবে তূর্ণা নিশীথার চালক তাহের উদ্দিনের সঙ্গে তারা কথা বলতে পারেননি। মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার জাকের হোসেন চৌধুরী চট্টগ্রামে থাকায় তার সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মিতু মরিয়ম আরও বলেন, দুর্ঘটনার সময় রেললাইনে পয়েন্টের অবস্থা, সিগন্যাল, স্টেশনের লগসিট, সার্ভার লাইন, কন্ট্রোল বক্সসহ সার্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, মূলত সিগন্যালের বিষয়টি সামনে রেখে কাজ করা হচ্ছে এবং রোববার প্রতিবেদন জমা দেবেন।

তদন্ত কমিটিগুলোর একাধিক সদস্য জানান, তূর্ণা নিশীথার চালক-সহকারী চালক, গার্ড, মন্দবাগ স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তারা একাধিকবার কথা বলেছেন। সিগন্যালের অবস্থা কি ছিল, কুয়াশা কেমন ছিল, চালক-সহকারী চালক ও গার্ড ঘুমিয়ে ছিল কিনা বা তারা নেশাগ্রস্ত ছিল কিনা- এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা জানান, দুর্ঘটনার পর চালক, সহকারী চালক ও গার্ড পালিয়ে গেলেও বুধবার সকালে তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। দুর্ঘটনার বিষয়ে তারা কথা বলেছেন।

বিভাগীয় পর্যায়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সিওপিএস (পূর্ব) মো. নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, তারা মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। দুর্ঘটনাকবলিত দুই ট্রেনের কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট ৪১ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার প্রতিবেদন জমা দেবেন। এ কমিটির এক সদস্য জানান, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল না মেনে ট্রেনটি চালাচ্ছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে আসছে। গার্ডও বিষয়টি দেখেননি। অথচ তারও দায়িত্ব ছিল। বিষয়টি গার্ড নজরে আনলে তার রুমে থাকা হোস পাইপ ছেড়ে ট্রেনটি খুব সহজেই দাঁড় করাতে পারতেন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, পরপর তিনটি সিগন্যাল অমান্য করার জন্যই যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তা তদন্তে স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিগন্যালগুলোর সব তথ্য-উপাত্ত ও রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। সিগন্যাল তিনটির কোনোটিতেই ত্রুটি দেখা যায়নি। ডিজিটাল বোর্ড থেকে এমন তথ্য সংগ্রহ করেছেন তারা। স্টেশন মাস্টারের রুম থেকে সিগন্যালসহ ট্রেন পরিচালনায় সব রের্কড সংগ্রহ করা হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, তদন্তে বেরিয়ে আসছে দুর্ঘটনাটি মূলত ট্রেন চালক, সহকারী চালক ও গার্ডের ভুলের কারণে ঘটেছে।

সুত্র:যুগান্তর, ১৫ নভেম্বর ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.