শিরোনাম

লেভেল ক্রসিং

রেলের ১৬৮০ গেটকিপারের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা!

।। ইসমাইল আলী ।।  সারাদেশে লেভেল ক্রসিংয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই অবৈধ। এগুলোয় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য সারাদেশে ৬৫৪টি লেভেল ক্রসিং উন্নয়নে ২০১৫ সালে দুটি প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এগুলোর আওতায় এক হাজার ৬৮০ গেটকিপারও নিয়োগ দেয়া…


কথা রাখছে না রেলপথ মন্ত্রণালয়

নিউজ ডেস্ক:চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ছয়টি প্রকল্প সমাপ্ত করার অঙ্গীকার করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেগুলোর মধ্যে ‘পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প ছাড়া পাঁচটি প্রকল্প যৌক্তিক কারণে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে…


উল্টো পথে রেল

বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৫৯তম জন্মদিন পালন করছে। আজ থেকে ১৫৯ বছর আগে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক কোম্পানি বাংলাদেশে প্রথম রেলপথ স্থাপন করে। ১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ…


নকশাগত ত্রুটি দ্রুত সংশোধন করা হোক

সারা বিশ্বে রেলকে সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে রেল ব্যবস্থাও নিরাপদ নয়। হরহামেশাই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে বিপুল প্রাণহানি ও পরিবহনের ক্ষতি হচ্ছে। আর এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ অরক্ষিত…


রেলগেটে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা

শামীম রাহমান : ঘটনাটি গত ১৩ আগস্টের। ২৬ টন এলপিজি বহন করা একটি ট্রাকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় গাজীপুরের পুবাইল রেলগেট বা রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ে। কাছাকাছি এলাকায় সে সময় কোনো ট্রেন না চলায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় ট্রাকটি। এলপিজিবাহী ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত ট্রেনেরও। সম্প্রতি রেল ভবনে অনুষ্ঠিত ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে গৃহীত ব্যবস্থাসংক্রান্ত সভায় এ ঘটনা উল্লেখ করেন গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) ঢাকার পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, সেদিন বড় কোনো দুর্ঘটনা না হলেও সড়কে বাংলাদেশ রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলোর উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে প্রায়ই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের গত সাত বছরের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানেও একই ধরনের চিত্র উঠে এসেছে। রেলওয়ের হিসাবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৫ জনেরই মৃত্যু হয়েছে রেলগেটে সংঘটিত দুর্ঘটনায়। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পারাপার হওয়ার সময় রেলগেটের ওপর গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে বেশকিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে এ সাত বছরে। এজন্য তারা দায় দিয়েছেন সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের বাড়তি উচ্চতাকে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সড়কের ওপর দিয়ে রেলপথ গেলে সেই রেলপথের উচ্চতা সড়কের সমান রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়ম থাকলেও এটা আমাদের দেশে মানার প্রবণতা একেবারেই কম। কোনো ধরনের আদর্শ নকশা না করে ও কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই বেশির ভাগ লেভেল ক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। স্বভাবতই ভুল নকশা আর ভুল পরিকল্পনায় নির্মাণ করা এসব লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে বেশি। সড়কের চেয়ে সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া রেলপথের উচ্চতা বেশি হলে তা কীভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যাটি বেশি হয় ভারী যানবাহন লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়। ভারী গাড়ির ভর বেশি থাকায় সেগুলো উঁচু লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায়। এ ঝাঁকুনির কারণে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার আশপাশে কোনো ট্রেন থাকলে গাড়িচালকের মানসিকতায়ও একটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। তখন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে চলাচল করা ভারী যানবাহনগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়াও এ ধরনের দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। সামগ্রিকভাবে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কের উচ্চতার সঙ্গে রেলপথের উচ্চতা সমান করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি লেভেল ক্রসিং নির্মাণের আগে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে এবং সঠিক পরিকল্পনা ও নকশায় সেগুলো নির্মাণ করতে হবে। লেভেল ক্রসিং এলাকায় সড়কের পিচ ঢালাইয়ে বিটুমিনের বদলে কংক্রিট ব্যবহার করা উচিত। শুধু লেভেল ক্রসিংয়ের বাড়তি উচ্চতাই নয়, বিপুলসংখ্যক রেল ক্রসিং অবৈধভাবে গড়ে তোলার ফলেও দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ রেলওয়ের দুই জোনে (পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল) বৈধ লেভেল ক্রসিং আছে ১ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে গেটকিপার আছে মাত্র ৪৪৮টিতে। বাকিগুলোয় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে যানবাহন। বৈধ, কিন্তু গেটকিপার নেই এমন লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) রেলওয়েতে বেশি। ৯৭৮টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে গেটকিপার আছে মাত্র ২২১টিতে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে (চট্টগ্রাম) ৪৩৪টির মধ্যে গেটকিপার আছে ২৪৫টি লেভেল ক্রসিংয়ে। প্রায় দেড় হাজার বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের পাশাপাশি সারা দেশে অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৮৫। এর কোনোটিতেই গেটকিপারের বন্দোবস্ত নেই। শুধু পারাপারের পথে ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিং লেখা সাইনবোর্ড দিয়ে দায় সেরেছে রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূসম্পত্তি শাখার তথ্য বলছে, রেলপথে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেল ক্রসিং বানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সারা দেশে ৪৫২টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং আছে তাদের। অর্থাৎ এসব লেভেল ক্রসিং বাংলাদেশ রেলওয়ে অনুমোদিত নয়। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬৩, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১১, পৌরসভার ৭৯, সিটি করপোরেশনের ৩৪, জেলা পরিষদের ১৩, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিন, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের এক, জয়পুরহাট চিনিকলের এক, ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তিন ও অন্যান্য রয়েছে ৯২টি। এছাড়া ৩৩টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে যেগুলোর মালিকানাই জানতে পারেনি রেলওয়ে। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর সিংগভাগই গড়ে উঠেছে পূর্বাঞ্চলে। এ অঞ্চলে অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৮১১। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেভেল ক্রসিংগুলোর বাড়তি উচ্চতা, বিপুলসংখ্যক অবৈধ লেভেল ক্রসিং গড়ে তোলা ও এগুলো পরিচালনায় পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে রেলগেটে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত বছরে সারা দেশে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে অন্য যানবাহনের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩১টি। এসব দুর্ঘটনায় ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে একই সময়ে সিগন্যাল অমান্যের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০টি, যেগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। সাত বছরে ৮৫৬টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে নয়জনের। সব মিলিয়ে এ সময়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের দাবি, ট্রেন দুর্ঘটনা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। ভবিষ্যতে ট্রেন দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। অন্যদিকে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে শুধু ২০২০ সালেই ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি। মৃত্যু হয়েছে ১৫৮ জনের। এর মধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে ১১৮ পথচারী। অন্য যানবাহনের সঙ্গে ঘটা ২০টি সংঘর্ষে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রেন দুর্ঘটনা আগের চেয়ে বাড়ছে বলেও জানিয়েছে এ ইনস্টিটিউট। ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে সামগ্রিকভাবে রেলপথমন্ত্রী জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ, রেলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ, প্রদেয় ক্ষতিপূরণ, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সূত্র:বণিক বার্তা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১


রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই লেভেল ক্রসিং স্থাপন এলজিইডির

শামীম রাহমান :বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম—দুই অঞ্চল মিলে রেলপথ আছে ৩ হাজার ১৯ কিলোমিটার। রেলের এ নেটওয়ার্কে অনুমতি না নিয়ে ১ হাজার ১৪৯টি লেভেল ক্রসিং গড়ে তুলেছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। অনুমোদনহীন এমন লেভেল ক্রসিং নির্মাণে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সরকারি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সব মিলিয়ে সংস্থাটি রেলপথের ওপর গড়ে তুলেছে পাঁচশর বেশি অবৈধ লেভেল ক্রসিং। যদিও গেটম্যানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে অনুমোদনহীন এসব ক্রসিংয়ে নিয়মিতই ঘটছে দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিসংখ্যানই বলছে, ২০০৮-২০১৮ সময়ে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে বিভিন্ন যানবাহনের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ২৬৩ জনের। আইন অনুযায়ী, রেলপথে লেভেল ক্রসিং নির্মাণের আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি পাওয়া গেলে রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করতে হয় লেভেল ক্রসিং। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে ৫১৬টি লেভেল ক্রসিং বানিয়েছে এলজিইডি। এর মধ্যে ৩৩২টিই বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে। পশ্চিমাঞ্চলে আছে অনুমোদনহীন বাকি ১৮৪টি লেভেল ক্রসিং। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো বানানোর সময় এর কোনোটিই করেনি এলজিইডি। শুধু রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা পার করিয়েই দায় সেরেছে সংস্থাটি। যানবাহন থামানোর জন্য গেট কিংবা গেটম্যান—রাখা হয়নি কোনোটিই। নেই সতর্কতামূলক সাইন/সিগন্যালও, যা তৈরি করছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। অনুমোদন না নিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা লেভেল ক্রসিংগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন খোদ স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মেজবাহ উদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের গ্রামীণ সড়কগুলোতে অনেক লেভেল ক্রসিং রয়েছে, যেগুলো যথাযথ নিময় মেনে বানানো হয়নি। ফলে মাঝেমধ্যেই এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রেলওয়ের সঙ্গে লেভেল ক্রসিং সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে আমার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সারা দেশে এলজিইডির কত অবৈধ লেভেল ক্রসিং আছে, সেগুলো আমরা শনাক্ত করছি। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোকে কীভাবে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনা যায়, এ বিষয়ে আমরা রেলওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ লেভেল ক্রসিং সমস্যার সমাধানে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে এলজিইডি। বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমতি নিয়ে বা অনুমতি ছাড়া এলজিইডির যেসব লেভেল ক্রসিং বানানো হয়েছে, সেগুলোয় রেলগেট, গুমটি ঘর নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহ করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। পাশাপাশি এলজিইডি নতুন যেসব সড়ক নির্মাণ করবে, সেগুলোয় যদি লেভেল ক্রসিং দেয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই কাজটি যথাযথ নিয়ম মেনে করার কথা বলছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এলজিইডি ছাড়াও আরো আট সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রেলপথে বিপুলসংখ্যক অবৈধ লেভেল ক্রসিং বানিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ১১টি, ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬৩টি, পৌরসভার ৭৯টি, সিটি করপোরেশনের ৩৪টি, জেলা পরিষদের ১৩টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি, জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষের একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি উদ্যোগে তিনটি, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ৯২টি ও ৩৩টি এমন অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে, যেগুলোর মালিকানা আসলে কার, তা এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে গেটম্যান আছে মাত্র ৪৪৬টি লেভেল ক্রসিংয়ে। জনবলের অভাবে এখনো গেটম্যানবিহীন রেলের ৬৮ শতাংশের বেশি লেভেল ক্রসিং। লেভেল ক্রসিংয়ের রেলগেট ওঠানো-নামানোর দায়িত্বে থাকেন গেটম্যান। গেটম্যান না থাকায় ৯৬৪টি বৈধ লেভেল ক্রসিং সুরক্ষা-নিরাপত্তার দিক দিয়ে তাই অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর কাতারেই রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুমোদিত ও অননুমোদিত মিলে দেশে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ১১৩। বিপুলসংখ্যক লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এগারো বছরে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭টি। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৩ জনের। লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০১৪ সালে। ৩৪টি দুর্ঘটনায় ওই বছর মারা যান ৫৪ জন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম মৃত্যু হয় ২০১৭ সালে। সে বছর ১৫টি দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। বিপুলসংখ্যক বৈধ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত থাকার কারণ হিসেবে জনবল সংকটের কথা বলছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জনবলের অভাবে অনেক বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গেটকিপার নিয়োগ ও পদায়নের প্রক্রিয়া চলমান থাকার কথা জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর সিংহভাগই যেহেতু বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বানিয়েছে, সেহেতু সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের বদলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে লেভেল ক্রসিংয়ের সড়কে গতিরোধক দেয়ার কথাও বলছেন তারা। গতিরোধক বসানো নিয়ে গতকাল রেলভবনে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সূত্র:বণিক বার্তা, জানুয়ারি ১১, ২০২১


উন্নয়নের উল্টো পথে রেল!

নাজমুস সালেহী : গত দশ বছরে রেল উন্নয়নের জন্য খরচ করেছে ৪৬ হাজার কোটি, চলছে ৩৯টি প্রকল্প যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রেলকে বাজেট দেয়া হয়েছে ১২…


অরক্ষিত ১৩৭ ক্রসিং

কামাল আতাতুর্ক মিসেল: ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা অঞ্চলের ১৩৭টি লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান। নেই যানবাহন ও পথচারী থামানোর ব্যারিয়ারও। এছাড়া কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দখলদাররা মূল্যবান সম্পত্তি দখল করে স্থাপনা…


ট্রেন দুর্ঘটনা ও ভ্রমণের নিরাপত্তা

এহসান বিন মুজাহির : যোগাযোগব্যবস্থায় সড়কপথের তুলনায় রেলপথে ভ্রমণ করা নিরাপদ এবং আরামদায়ক। অথচ রেল যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেনি। বর্তমানে ট্রেন দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। কোনোভাবেই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে রেলপথের সিলেট…


গাজীপুরবাসীর দুঃখ জয়দেবপুর লেভেল ক্রসিং

আবিদ হোসেন বুলবুল: জয়দেবপুর জংশন লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিনের অসহনীয় তীব্র যানজট গাজীপুর নগরবাসীর দুঃখের প্রধান কারণ। প্রতিদিন এই লেভেল ক্রসিং দিয়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ৭২টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে। এতে ১০-১৫ মিনিট…