শিরোনাম

সেতুর নকশা

আরো দীর্ঘায়িত হবে ঢাকা কক্সবাজার ট্রেন চলাচল

সুজিত সাহা : সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের ৪১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বাকি কাজ। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রস্তাবিত কালুরঘাট সেতুর নকশা জটিলতায় রেললাইন নির্মাণ শেষেও এ পথে ট্রেন চলাচল নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুটির উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তাদের এ আপত্তির কারণে সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনতে হবে। এতে ঝুলে যেতে পারে প্রকল্পের অর্থায়নও। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ডুয়াল গেজ রেলপথ সংস্কারসহ আটটি প্যাকেজের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাটে অবস্থিত পুরনো রেল সেতুর স্থলে নতুন ‘রেলওয়ে কাম রোড সেতু’ নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শুধু রেল সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেয়ায় প্রকল্পটির কাজ স্তিমিত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে রোড কাম রেল সেতু নির্মাণের দাবি জোরালো হলে পুরনো নকশায় সেতু নির্মাণে কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে রেলওয়ে। প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ মিটার, যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার করার শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। ফলে সেতুর বর্তমান নকশা নিয়ে জটিলতায় পড়েছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ। সম্প্রতি সেতুটির নকশা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে রেলওয়েকে একটি চিঠি দেয় প্রকল্পে অর্থায়নকারী দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রয়ত্ত দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। গত ১০ জুন ইডিসিএফের সিনিয়র লোন অফিসার ইয়েলি কিম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অথবা শুধু রেল সেতু নির্মাণের বিষয়ে রেলওয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি স্ট্যান্ডার্ড সর্বনিম্ন নেভিগেশনাল ছাড়পত্র কত হবে, সিঙ্গেল নাকি ডাবল রেললাইন, লেন সংখ্যা, সেতুর টাইপ (এক্সট্রা ডোজড/ট্রাশ), রেলওয়ে গেজ (সিঙ্গেল/ডাবল), ব্রড গেজ বা মিটার গেজ এবং প্রকল্পের সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় সম্পর্কে কূটনৈতিক চ্যানেলে বিস্তারিত প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। ইডিসিএফের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান রেলপথ মন্ত্রণালয় ও ইডিসিএলের কাছে ফিরতি চিঠি দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিআইডব্লিউটিএ কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স হিসেবে সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কিন্তু রেলওয়ে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে। বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উচ্চতা আরো কমিয়ে আনতেও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কূটনৈতিক মাধ্যমে কোরীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে নতুন করে অর্থায়ন প্রস্তাবের অনুরোধ জানানো হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ থেকে সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধির নির্দেশনার পর রেলওয়ে বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সুরাহা করতে বৈঠক করে। বৈঠকে বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শনে একটি কমিটি করে দেয়া হয়। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আই) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারকে প্রধান করে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর বিআইডব্লিউটিএর প্রস্তাবকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আরেক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের চিন্তাভাবনা করছে রেলওয়ে। কেননা বর্তমান নকশায় ৭ দশমিক ২ মিটার উচ্চতার সেতুর পরিবর্তে উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার করা হলে সেতুর দৈর্ঘ্য, নির্মাণ ব্যয় ও সময় বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের অর্থায়ন জটিলতা ছাড়াও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষেও কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় আগের নকশা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা করছেন রেলওয়ের সেতু বিভাগ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের কিছুটা বিলম্বে কাজ শুরু হলেও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। এরই মধ্যে ৪১ শতাংশ কাজ শেষও হয়েছে। আশা করছি ২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এ সময়ের মধ্যে নতুন সেতু নির্মাণ শেষ হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বিষয়টির সঙ্গে রেলপথ নির্মাণ কাজের সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির নকশাগত সমস্যা সমাধান হলে নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই, ডিপিপি প্রস্তুত করতে এক বছর সময় লাগবে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে সেটি শেষ হতেও সময় লাগবে আরো দুই বছর। সব মিলিয়ে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে। এর মধ্যেই দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। ফলে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটির কাজ শেষেও শুধু সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তায় ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচলের শতভাগ সুফল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বর্তমানে স্বল্প পরিসরে ছোট ইঞ্জিন ও চার পাঁচটি কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো হলেও এর চেয়ে বেশি কোচ দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিসও প্রশ্নের মুখে পড়বে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) মো. গোলাম মোস্তফা বণিক বার্তাকে বলেন, সেতুটির উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি জানিয়েছে। আমরা এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে বৈঠক করেছি। উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে রেলওয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দিলে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করব। সূত্র:বণিক বার্তা, আগস্ট ২০, ২০২০