শিরোনাম

মেঘনা অয়েল

রেলওয়ের কাছে ৮৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি মেঘনা অয়েলের

সুজিত সাহা : সম্প্রতি জ্বালানি তেল পরিবহনের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয় রেলের একটি ট্রেন। দুর্ঘটনায় চারটি ওয়াগনের জ্বালানি নষ্ট হয়ে যায়। মাত্র ৯৩ হাজার টাকার ভাড়ার এ পরিবহনে দুর্ঘটনায় ৮৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে। সম্প্রতি জ্বালানি পরিবহন বাবদ ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানে রেলওয়ের কাছে দাবি তুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড। এর আগে গত ৭ নভেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জ্বালানি তেলবাহী ওয়াগন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ার পর চারটি ওয়াগন উল্টে পাশের জমিতে পড়ে যায়। লাইনচ্যুত চারটি ওয়াগনের তেল ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মানুষ এসব তেল সংগ্রহ করে। ফলে ওয়াগনগুলোর ৯৯ হাজার ৭২০ লিটার ডিজেল ও ৩৯ হাজার ২৩১ লিটার কেরোসিন নষ্ট হয়। এ ঘটনায় জ্বালানি পরিবহন চুক্তির শর্ত অনুসারে রেলের কাছে প্রায় ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে মেঘনা অয়েল কোম্পানি। রেলের মাধ্যমে সরকারি পণ্য পরিবহনে অগ্রিম ভাড়া আদায় করা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে ক্রেডিট নোটের মাধ্যমে এ ভাড়া অগ্রিম সংগ্রহ করে জ্বালানি পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে মেঘনা অয়েলের জ্বালানি পরিবহনে পাঁচটি ওয়াগনের ভাড়া বাবদ মোট ৯৩ হাজার ৯৭৭ টাকা অগ্রিম সংগ্রহ করে রেলওয়ে। তবে নির্ধারিত স্থানে জ্বালানি পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়া ছাড়াও দুর্ঘটনায় পথিমধ্যে জ্বালানি নষ্ট হওয়ায় রেলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভাড়া বাবদ মোট ৮৮ লাখ ২০ হাজার ৯৯৬ টাকা ৫৬ পয়সা আদায়ে চিঠি দেয় মেঘনা অয়েল কোম্পানি। গত ১১ নভেম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে দেয়া চিঠি সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় ৬৩০৬০ নং ওয়াগনের ৩৯ হাজার ২৩১ লিটার নষ্ট হওয়া কেরোসিনের মোট মূল্য ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫২২ দশমিক ৩৬ টাকা (প্রতি লিটার ৬৩ দশমিক ৫৬ টাকা হিসাবে), ৬৩০০১ নং ওয়াগনের ৩৯ হাজার ৩১ লিটার ডিজেলের মূল্য বাবদ ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৭ দশমিক ৮১ টাকা (প্রতি লিটার ৬২ দশমিক ৫১ টাকা হিসাবে), ৬৩০৫৩ নং ওয়াগনের ৩৯ হাজার ২৬২ লিটার ডিজেল মূল্য ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৭ দশমিক ৬২ টাকা এবং ৬১৮১৪ নং ওয়াগনের নষ্ট হওয়া ২১ হাজার ৪২৭ লিটার ডিজেলের মূল্য ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪০১ দশমিক ৭৭ টাকা। মোট ৯৯ হাজার ৭২০ লিটার ডিজেল ও ৩৯ হাজার ২৩১ লিটার কেরোসিনের মোট মূল্য ৮৭ লাখ ২৭ হাজার ১৯ টাকা ৫৬ পয়সার সঙ্গে অগ্রিম ভাড়া ৯৩ হাজার ৯৭৭ টাকাসহ (দুর্ঘটনায় নষ্ট হওয়া চার ওয়াগন জ্বালানি পরিবহনের ভাড়া) ৮৮ লাখ ২০ হাজার ৯৯৬ টাকা ৫৬ পয়সা আদায়ের দাবি তুলেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড। মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (এমপিএল) সূত্রে জানা গেছে, রেলের সঙ্গে সরকারি জ্বালানি বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর পরিবহনে বিশেষ চুক্তি রয়েছে। ওয়াগনযোগে জ্বালানি তেল পরিবহনকালে সংঘটিত ঘাটতির ক্ষেত্রে সম্পাদিত চুক্তির দায়িত্ব-পত্র ফরমের (জি) শর্ত অনুযায়ী রেলওয়ে নষ্ট হওয়া মালামাল বা জ্বালানির সমুদয় ক্ষতিপূরণ করতে বাধ্য। তবে জ্বালানি পরিবহনের ভাড়া ও ক্ষতিপূরণ দাবি করা হলেও রেলওয়ের অডিট, পরিদর্শনসহ তদন্ত চলমান থাকায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সময় সাপেক্ষ হবে বলে জানিয়েছে মেঘনা অয়েল। জানতে চাইলে মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর সাইফুল্লাহ আল খালেদ বণিক বার্তাকে বলেন, রেলপথে জ্বালানি পরিবহন সাশ্রয়ী ও ঝুঁকিমুক্ত। কিন্তু সিলেট রুটের বর্তমান অবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেলের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নষ্ট হওয়া জ্বালানি তেলের মূল্য এবং অগ্রিম পরিশোধ করা ভাড়ার অর্থ ফেরত চাওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে কিছুটা বিলম্বে হলেও রেলওয়ে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে বলে আশা করছেন তিনি। জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে সিলেটের মোগলাবাজার ডিপোতে নিয়ে যাওয়ার সময় সংঘটিত দুর্ঘটনাটি মৌলভীবাজারের সাতগাঁও স্টেশনে সংঘটিত হলেও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও দুর্ঘটনাকবলিত ওয়াগনগুলোর জ্বালানি স্থানীয় মানুষ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো জ্বালানির নিরাপত্তা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় রেলওয়েকে মাত্র ৯৩ হাজার টাকার ভাড়ার একটি ট্রেনে প্রায় ১০০ শতাংশ জরিমানা গুনতে হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ আখাউড়া-সিলেট। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ থেকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিলেট মুখে ট্রেন চলাচল করলেই নড়বড়ে রেলপথের কারণে গত কয়েক বছরে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে জ্বালানিবাহী ওয়াগনগুলো। ৭ নভেম্বর সাতগাঁও স্টেশনে দুর্ঘটনার পর ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার স্টেশনের সন্নিকটে আরেকটি জ্বালানিবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায় পতিত হয়। মূলত জ্বালানিবাহী ওয়াগনগুলো ওজন বেশি হওয়ায়, দীর্ঘদিনের পুরনো রেল ট্র্যাক, পুরনো ইঞ্জিন ও রেলপথে পর্যাপ্ত পাথর না থাকার কারণে রেলওয়ের অধীনে পরিবহন করা জ্বালানিবাহী ট্রেনের দুর্ঘটনা বেড়েছে। এতে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রেলওয়েকে ভাড়া আদায়ের চেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হচ্ছে। সূত্র:বণিক বার্তা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০