শিরোনাম

কমলাপুরে

রেলে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে লোকোমোটিভ সিমুলেটর

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত হচ্ছে লোকোমোটিভ সিমুলেটর। ট্রেন চালকদের (লোকোমাস্টার) প্রশিক্ষণে ব্যবহার হবে এ যন্ত্র সরাসরি ট্রেন ব্যবহার না করে লোকোমোটিভ সিমুলেটরে ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকায় স্পেন থেকে কেনা হয়েছে সিমুলেটরটিস্থাপন করা হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। আজ সিমুলেটরটি উদ্বোধন করবেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলাপুরে স্থাপিত সিমুলেটরে আপাতত দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রুটের কিছু অংশের ভিডিও গ্রাফিকস সংযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকাচট্টগ্রাম রেলপথের ঢাকা-আখাউড়া অংশের ১৫০ কিলোমিটার ও ঢাকাখুলনা রেলপথের ১৫০ কিলোমিটারের ভিডিও গ্রাফিকস যুক্ত হয়েছেএ দুই ভিডিও গ্রাফিকস রেলপথ দুটির বাস্তব অবস্থা চিত্রায়িত হয়েছেফলে প্রশিক্ষণের সময় রুট দুটি সম্পর্কে বাস্তবিক ধারণা অর্জনে সক্ষম হবেন চালকরা। পর্যায়ক্রমে দেশের সব রুট সিমুলেটরে অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নূর আহাম্মদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সিমুলেটরটি দিয়ে বাস্তবে ট্রেন না চালিয়েও ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন চালকরাবাস্তবে একটি ট্রেন ইঞ্জিনে যা যা থাকে, সিমুলেটরেও সেসব থাকছে পাশাপাশি রুটগুলোর ভিডিও গ্রাফিকস থাকছেসিমুলেটরে সবকিছু কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। স্পেন থেকে কেনা সিমুলেটরটিতে ট্রেন চালানোর সময় ১২ ধরনের প্রতিবন্ধকতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ট্রেন চালানোর সময় হঠাৎ সামনে কোনো মোটরযান বা অন্যকিছু চলে এলে তাত্ক্ষণিক করণীয় কী হবে, তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। লেভেল ক্রসিং, সিগন্যালিংসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চালকের করণীয় নিয়েও প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে। ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের অনেক বিষয় এ সিমুলেটরে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিমুলেটরের মাধ্যমে চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য রেলওয়ের তিনজন জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী ও একজন কর্মকর্তা স্পেন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। তারা নতুন চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি নতুন প্রশিক্ষক তৈরিতেও কাজ করবেন। প্রাথমিকভাবে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত লোকোমাস্টারদেরই সিমুলেটরে প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। রেলওয়ের কর্মকর্তা বলছেন, ট্রেন চালক হিসেবে প্রাথমিকভাবে ‘সহকারী লোকোমাস্টার (গ্রেড-২)’ কর্মী নিয়োগ করা হয়। এরপর নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী লোকোমাস্টারকে পাঠানো হয় দুই বছর মেয়াদি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে। সরাসরি ট্রেন চালানোর আগে একজন লোকোমাস্টারকে অন্তত ৮-১০ হাজারবার ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এতে প্রশিক্ষণ সময় আরো বেড়ে যায়। লোকোমোটিভ সিমুলেটরের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ অনেকটাই কমে আসবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭৪২ জন ট্রেন চালক বর্তমানে রেলওয়েতে কর্মরত। এর মধ্যে অভিজ্ঞ চালকের (লোকোমাস্টার গ্রেড-১) সংখ্যা মাত্র ২৩৬ জন। গ্রেড-২ র্যাংকের চালক আছেন ৩৮৮ জন। চলাচলরত যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের তুলনায় চালকের সংখ্যা অনেক কম। নতুন চালকদের অভিজ্ঞতাতেও রয়েছে ঘাটতি। বিদ্যমান ব্যবস্থায় চালক প্রশিক্ষণের জন্য সরাসরি ট্রেন ব্যবহার করা হয়। এজন্য প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে চলাচলরত ট্রেনগুলোই ব্যবহার করছে রেলওয়ে। সহকারী লোকোমাস্টার (গ্রেড-২) পদে যোগ দিয়ে একজন চালকের পূর্ণাঙ্গ লোকোমাস্টার হতে সময় লাগে আট বছর। সিমুলেটর ট্রেন চালকদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনের এক্ষেত্রে এ দীর্ঘ সময় কমিয়ে আনবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সুত্র:বণিক বার্তা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯