ইসমাইল আলী: ঘাটতি মেটাতে ৩০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কিনবে রেলওয়ে। গত মাসে প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম ধরা হয়েছিল (ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া) ৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে প্রতিটির দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। নতুন হিসাবে প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম পড়ছে ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যদিও ইঞ্জিনগুলোর ভারবাহী ক্ষমতা (এক্সেল লোড) আগের চেয়ে কমানো হচ্ছে।
ইঞ্জিনের সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশ কেনায় ব্যয় বাড়ানো হয়েছে আরও সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ইঞ্জিনগুলো কেনায় প্রায় ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্তে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষণ কমিটির ওই সভায় ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তোলে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
তথ্যমতে, ৩০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৪৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ইঞ্জিনপ্রতি দাম পড়বে গড়ে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ভ্যাট-কর ছাড়া দাম ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে এক্ষেত্রে প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম বেশি ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এর জবাবে রেলওয়ে জানায়, ২০১২ সালে তিন হাজার ১০০ হর্স পাওয়ারের ১৬টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল। এতে দাম পড়ে ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তার ওপর বছরপ্রতি আট শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি ধরে পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। এতে পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে ধরে ইঞ্জিনের ব্যয় প্রাক্কলন করেছে রেলওয়ে। পাশাপাশি এবার তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। এজন্য আরও পাঁচ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।
যদিও পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির কোনো ধরনের যুক্তি নেই বলে মনে করেন রেলওয়ে প্রকৌশলীরা। তারা জানান, ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনায় গত বছর দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে। ২০১১ সালে ইঞ্জিনগুলো কেনার প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। সে সময় দাম ধরা হয় ভ্যাট-কর ছাড়া ২০ কোটি টাকা। তবে গত বছর দরপত্রে ২০ কোটি টাকারও কম প্রস্তাব করে স্পেনভিত্তিক সুইস কোম্পানি স্ট্যাডলার রেল। এ হিসেবে ছয় বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে ইঞ্জিনের মূল্য বাড়েনি।
এদিকে এক মাসের ব্যবধানে ইঞ্জিনপ্রতি দাম চার কোটি টাকা বাড়ানো হলেও কমানো হচ্ছে এগুলোর ভারবাহী ক্ষমতা। গত মাসে প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে ইঞ্জিনের প্রতিটি চাকায় এক্সেল লোড ধরা হয় সাড়ে ২২ টন। আর এবার প্রতিটি চাকায় এক্সেল ধরা হয়েছে সাড়ে ১৮ টন। এক্সেল লোড কমায় এগুলোর কোচ (বগি) টানার ক্ষমতা তুলনামূলক কম হবে। এতে ইঞ্জিনপ্রতি ব্যয় বাড়ার কোনো যুক্তি নেই।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে ইঞ্জিনগুলো কেনা হবে। তাদের স্পেসিফিকেশনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজারদর যাচাই করে ইঞ্জিনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এডিবির ঋণের অংশও নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা এ প্রস্তাবে সম্মতিও প্রদান করেছে। এছাড়া ২০১২ সালে কেনা ইঞ্জিনগুলোর এক্সেল লোডও ছিল সাড়ে ১৮ টন। এছাড়া বিদ্যমান রেলপথের অবস্থায় এর চেয়ে ভারী ইঞ্জিন কেনার যুক্তি নেই।
রেলওয়ের গেজেট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাইটসের তৈরি তিন হাজার ৬০০ হর্সপাওয়ারের ব্রডগেজ ইঞ্জিনের দাম ২৩ থেকে ২৫ কোটি টাকা। কোরিয়া থেকে কেনা হলে এক্ষেত্রে দাম পড়বে ২৮ কোটি টাকার মধ্যেই। স্পেনের তৈরি ইঞ্জিনের দামও একই ধরনের। তবে ফ্রান্স বা জার্মানি থেকে কেনা হলে ব্যয় কিছুটা বেশি হবে। এক্ষেত্রে দাম পড়তে পারে ৩০ কোটি টাকা।
বাজারমূল্যের সঙ্গে ইঞ্জিনপ্রতি সাত-আট কোটি টাকা ভ্যাট-কর যোগ করলে সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি টাকায় ব্রডগেজ ইঞ্জিন পাওয়া যাবে। যদিও বর্তমানে প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি দামে ইঞ্জিনগুলো কেনা হচ্ছে।
রেলওয়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, ২০১২ সালে সর্বশেষ ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনা হয়। তবে ভারতের ঋণের শর্তই ছিল দেশটি থেকে ইঞ্জিন কিনতে হবে। তাই দাম বেশি হলেও কোনো বিকল্প ছিল না। তবে এবার এডিবির ঋণে ইঞ্জিন কেনায় উš§ুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। তাই কম দর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে অতিরিক্ত দরপ্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা।
উল্লেখ্য, ৩০টি ইঞ্জিন কেনায় এক হাজার ১৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে এডিবির কাছে। যদিও সুদহার কিছুটা বেশি হওয়ায় এ ঋণের শর্ত নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। আর বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করবে ৩০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
সুত্র:১৭ মার্চ ২০১৭,শেয়ার বিজ
Be the first to comment on "এক মাসে ইঞ্জিনপ্রতি দাম বাড়ছে চার কোটি টাকা"