শিরোনাম

বিবিধ সংবাদ

করোনায় সাড়ে ২২ মাস বন্ধ বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ট্রেন

ইসমাইল আলী: বাংলাদেশ ও ভারতের মাধ্যে চলাচল করত দুটি যাত্রী ট্রেন। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার ঠিক আগে বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ও খুলনা-কলকাতা রুটের বন্ধন এক্সপ্রেস। এরপর সাড়ে ২২ মাস…


অর্থায়ন অনিশ্চয়তায় ঝুলে যাচ্ছে হাইস্পিড ট্রেন!

ইসমাইল আলী: ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এক ঘণ্টায় যাতায়াত সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহজলভ্য কোনো অর্থায়নের…


কঠিন শর্তের ঋণ গ্রহণের প্রস্তাবে ইআরডির আপত্তি

ইসমাইল আলী: ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনায় ২০১১ সালে একটি প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। তবে এক দশকেও এগুলো কেনা সম্পন্ন হয়নি। ইঞ্জিনগুলো কেনায় দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে কঠিন শর্তের ঋণ নেয়ার কথা ছিল। তবে এ ঋণ প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছে…


রেলপথ সম্প্রসারণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

শামীম রাহমান: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মগবাজার-কমলাপুর-কুতুবখালী অংশে পিয়ারের (খুঁটি) জন্য পোর্টাল ফ্রেম নকশা করা হয়েছে। এ ধরনের পিয়ার তৈরি করা হয় দুই পাশে দুটি ‘কলাম’ ও ওপরে ‘বিম’ দিয়ে। নকশা অনুযায়ী, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পোর্টাল…


ট্রেনে সবচেয়ে বেশি পাথর ছোড়া হয় ২৫ পয়েন্টে

তৌফিকুল ইসলাম বাবর: নিরাপদ ও আরামের ট্রেনযাত্রায় আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে ‘পাথর নিক্ষেপ’। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মেরে এক ধরনের ‘মরণ খেলায়’ মেতে ওঠে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। পাথর নিক্ষেপের স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। চলছে…


সিলেটে রেলপথে অবৈধ ক্রসিং

নিউজ ডেস্ক:সিলেট রেলপথে অবৈধ রেল ক্রসিং। এসব অবৈধ রেল ক্রসিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। রেলওয়ে পুলিশ সিলেট জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে।…


চিলমারীতে ১৯ মাস ধরে রেল যোগাযোগ বন্ধ

নিউজ ডেস্ক:  কুড়িগ্রামের চিলমারী-রংপুর-পার্বতীপুর রেলপথে ১৯ মাস ধরে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ, ড্রাইভার ও ইঞ্জিন স্বল্পতা এবং স্টেশন মাস্টার না থাকার অজুহাতে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা রেলওয়ে যোগাযোগ সারা দেশে…


যাত্রীর পার্স ছিনিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে গেল দুর্বৃত্ত, ছবি ভাইরাল

নিউজ ডেস্ক: এক নারী যাত্রীর পার্স (টাকা ও জরুরিসামগ্রী রাখার ছোট হাতব্যাগ)  ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নির্বিঘ্নে নেমে যাচ্ছে দুর্বৃত্ত। এ দৃশ্য শনিবার সকালে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত ট্রেনটির কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার জংশন…


অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, বিশ্বব্যাংকের আগ্রহ রেলের বাণিজ্যিকীকরণে

শামীম রাহমান : বিদ্যমান রেলপথের উন্নয়ন, নতুন রেলপথ, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি), কারখানা নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আটটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রেলের প্রস্তাবে ছিল না এমন আরো দুটি উদ্যোগের সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে সংস্থাটি। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাংক যে পাঁচটি উদ্যোগে সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বদলে প্রাধান্য পেয়েছে পরিচালন ব্যবস্থা বাণিজ্যিকীকরণের মতো বিষয়গুলো। চট্টগ্রাম-দোহাজারীর বিদ্যমান মিটার গেজ রেলপথটি ডুয়াল গেজে রূপান্তর, লাকসাম-চিনকি-আস্তানার বিদ্যমান মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর, পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধার মধ্যে নতুন রেলপথ নির্মাণ, পতেঙ্গায় বে টার্মিনাল রেল সংযোগ তৈরি, ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণ, দাড়িপাড়ায় রেলওয়ের কারখানা নির্মাণ, রেলওয়ের ইনভেন্টরি কন্ট্রোল সিস্টেমের অটোমেশন এবং ঢাকায় রেলওয়ে ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছে বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ২ আগস্ট বিশ্বব্যাংকের রিজিওনাল ডিরেক্টর (সাউথ এশিয়া) অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুয়াংজে চেনের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ঢাকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বে টার্মিনাল কানেক্টিভিটি, ধীরাশ্রম আইসিডি ও বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল (বিবিআইএন) কানেক্টিভিটির জন্য পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা রেলপথের উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এগুলোর বাইরে রেলওয়ের অধীনস্থ সংস্থা কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কমলাপুর, তেজগাঁও ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনকে মাল্টিমোডাল হাব হিসেবে তৈরির উদ্যোগেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। গতকাল বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বরাবর পাঠানো এক ই-মেইলে উদ্যোগগুলোর বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম লিডার (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড ভুটান) রাজেশ রোহাতগী। ই-মেইলে তিনি উল্লেখ করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করার জন্য বিশ্বব্যাংকের একটি দল রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। পাশাপাশি উদ্যোগগুলো নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক ‘নলেজ শেয়ারিং ইভেন্ট’ আয়োজনেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এসব ইভেন্টে রেলওয়ের পরিচালন ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণ এবং মাল্টিমোডাল হাবগুলো যথাযথভাবে পরিচালনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ইভেন্টগুলোতে সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য রেলওয়ের একটি দলকে মনোনীত করতে মহাপরিচালককে আহ্বান জানিয়েছেন রাজেশ রোহাতগী। এর আগে গত ২৩ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজাকে একটি চিঠি দেন বিশ্বব্যাংকের রিজিওনাল ডিরেক্টর (সাউথ এশিয়া) অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুয়াংজে চেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সবুজ, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার রেলওয়ে খাতটিকে নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা করছে, তা বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্যের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। আমরা পরিবহন খাতকে কার্বনমুক্ত করার উদ্যোগগুলোকে সহযোগিতা করতে চাই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে বাণিজ্যিকভিত্তিক রেলওয়ে ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে পতেঙ্গা বে টার্মিনাল পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে কনটেইনার পরিবহন, বিবিআইএনভুক্ত দেশগুলোয় বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমিকা উন্নত করা এবং ‘ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট’ এবং পিপিপির মতো বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে বিভিন্ন বিনিয়োগ কর্মসূচিতে রেলওয়েকে বেসরকারি ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার মতো ইস্যুগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাংক আলোচনায় আগ্রহী।  পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য-প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কারিগরি সহায়তা ও সম্ভাব্য অর্থায়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখার কথা বলেছেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের কাছে বিনিয়োগের জন্য রেলওয়ের প্রস্তাব এবং পরবর্তী সময়ে প্রস্তাবগুলোর আলোকে বিশ্বব্যাংকের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, বিষয়গুলো এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা মৌখিক আলোচনা এবং ই-মেইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে উদ্যোগী হতে চাইছে। রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য যেকোনো উন্নয়ন সহযোগীর বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রসঙ্গত, বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা মিলে বর্তমানে ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে ২ হাজার ২০৯ কোটি টাকার ১৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জিওবি তহবিল থেকে।  পাঁচটি প্রকল্পে ২২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। রোলিং স্টক সংগ্রহের একটি প্রকল্পে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। ছয়টি প্রকল্পে ১১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা ভারত দিয়েছে লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে। জিটুজি ভিত্তিতে তিনটি প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে চীন। টেন্ডারার্স ফাইন্যান্সিং ও ভারত সরকারের ঋণে চলমান আছে একাধিক প্রকল্প। চলমান প্রকল্পগুলোতে বিশ্বব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ নেই। সূত্র:বণিক বার্তা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১


খারাপ রেল অবকাঠামোয় এশিয়ার পাঁচ দেশের অন্যতম বাংলাদেশ

শামীম রাহমান : তিন হাজার কিলোমিটারের রেল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের। পুরনো রেলপথ আর রেলসেতুতে ট্রেনের লাইনচ্যুতি বাংলাদেশ রেলওয়ের নিত্য ঘটনা। সিগন্যাল ব্যবস্থা যেমন দুর্বল, তেমনি দুর্বল স্টেশনের অবকাঠামো। বুড়িয়ে গিয়েছে সিংহভাগ ইঞ্জিন। নতুন নতুন কোচ এলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো দ্রুত চলে যাচ্ছে ভঙ্গুর দশায়। সময় মেনে না চলা, টিকিট পেতে হয়রানি, কর্মীদের অদক্ষতার মতো বিষয়গুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে যাত্রীসেবার মানে। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাও দুর্বল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর মান রয়ে গিয়েছে বৈশ্বিক সূচকের তলানিতে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) তথ্য বলছে, এশিয়ায় খারাপ রেল অকাঠামো রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। কোন দেশের রেল অবকাঠামো কেমন, সূচক আকারে তা নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে ডব্লিউইএফ। সূচকটি তৈরিতে রেল যোগাযোগ রয়েছে এমন দেশগুলোকে ১ থেকে ৭-এর মধ্যে ‘স্কোরিং’ করেছে সংস্থাটি। রেল অবকাঠামো সবচেয়ে অনুন্নত হলে ১ আর সবচেয়ে ভালো হলে ৭ পর্যন্ত স্কোর দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এ সূচকে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর স্কোর ৩ দশমিক ১। আর ১০১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬১ নম্বরে। এশিয়া মহাদেশে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ রেলপথ রয়েছে আর মাত্র তিনটি দেশে। থাইল্যান্ডের অবস্থান সূচকের ৭৫ নম্বরে। জর্ডান ও ফিলিপাইন রয়েছে যথাক্রমে ৮০ ও ৮৬ নম্বরে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের। ডব্লিউটিএফের ‘কোয়ালিটি অব রেলরোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ সূচকে ভারতের অবস্থান ২৮তম। ৪৭ ও ৪৮ নম্বরে রয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। ডব্লিউটিএফের সূচক অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ভালো রেল অবকাঠামো জাপানের। ৭-এর মধ্যে ৬ দশমিক ৮ স্কোর পেয়েছে দেশটির রেল অবকাঠামোর মান। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর রয়েছে যথাক্রমে শীর্ষ পাঁচে। বিপরীতে সবচেয়ে খারাপ রেল অবকাঠামো উরুগুয়ের। এরপর যথাক্রমে রয়েছে আলবেনিয়া, ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া ও বেনিন। উন্নত প্রযুক্তি আর অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, কঠোর সময়ানুবর্তিতার মতো বিষয়গুলোয় জোর দিয়ে উন্নত দেশগুলো যেখানে তাদের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দিচ্ছে, সেখানে এখনো পুরনো অবকাঠামোগুলোই ঠিকমতো ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংস্কারের অভাবে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রেলপথ। জনবলের অভাবে বন্ধ থাকছে স্টেশন। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়াই নতুন নতুন ট্রেন নামিয়ে বাড়ানো হচ্ছে শিডিউল বিপর্যয়। রেলপথ, রোলিংস্টক, সিগন্যাল ব্যবস্থা, জনবল, ট্রেন পরিচালনা ব্যবস্থা, যাত্রীসেবায় বছরের পর বছর ধরে কেবল লোকসানই গুনে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। স্বাধীনতার পর থেকেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘ধারাবাহিকভাবে অবহেলা’র কারণেই বাংলাদেশ রেলওয়ের এ বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, শুরু থেকেই রেলের উন্নয়নে নীতিগত ভুল আমরা করেছি। খাতটিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ তো করিইনি, উল্টো আমরা জনবল কমিয়েছি। স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছি। রক্ষণাবেক্ষণ না করে রেল অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছি। বিগত কয়েক বছরে রেলওয়েতে বড় বড় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের একটা বড় ঘাটতি আছে। কোন কাজটি আগে করতে হবে, কোনটি পরে হবে—তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে না। বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের দিকেই সবার ঝোঁকটা বেশি। রেলওয়েতেও তাই হচ্ছে। আমাদের রেললাইন খারাপ, আমাদের লাইনে সক্ষমতার চেয়ে ট্রেন চলাচল বেশি, আমাদের পরিকল্পনা দুর্বল, আমাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, আমরা পেশাদার নই। সরকার ও রেলওয়ের উচিত সবার আগে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর গত এক দশক ধরে রেলপথের উন্নয়নে অনেক বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে রেলওয়ের অবকাঠামো থেকে যাত্রীসেবার ধরন—সবকিছুই বদলে ফেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে মানুষ এসবের সুফলও পেতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তারা। ডব্লিউইএফের তথ্যেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর ক্রমোন্নতির চিত্র। ২০১৩ সালে ২ দশমিক ৪৪ স্কোর পেয়ে ১০১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো ছিল ৭৮তম অবস্থানে। সেখান থেকে ১৭ ধাপ এগিয়ে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চলে এসেছে ৬১তম স্থানে। স্কোরে উন্নতি হয়েছে দশমিক ৬৬ শতাংশ। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন মনে করছেন বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যেভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে আরো ভালো হয়ে উঠবে অবকাঠামোর মান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, রেলকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। নতুন নতুন রেলপথ, রেলসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। বন্ধ থাকা স্টেশন চালু করা হচ্ছে। নতুন কোচ-ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুচ্চালিত, হাইস্পিড ট্রেন চালুর জন্য আমরা কাজ করছি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় রেলপথ নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতেও সেগুলোর ব্যবহার শুরুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোর মান আরো উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। সূত্র:বণিক বার্তা, জুলাই ১৭, ২০২১